বন্যা মোকবেলা: আগাম প্রস্তুতি ও করণীয়

ছবি: সংগৃহিত

বন্যা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রতিবছরই দেশের প্রায় ৫০ ভাগ এলাকা বন্যার ফলে প্লাবিত হয়ে থাকে। ভৌগলিক অবস্থান, ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, নদ-নদীসমূহের বিন্যাস, আন্তঃদেশীয় পানি বণ্টন সমস্যা, অপরিকল্পিত অবকাঠামোগত উন্নয়ন, জলাভূমি ও জলাশয়সমূহ ভরাট, অপর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, নেতিবাচকভাবে নদী শাসন, বন উজাড়, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে প্রায় প্রতিবছরই বাংলাদেশের কোননা কোনো স্থান ছোট, মাঝারি বা বড় ধরনের বন্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে।

পূর্ব প্রস্তুতি

  • বাড়ীর ভিটা স্বাভাবিক উচ্চতার চেয়ে বেশি উঁচু করে নির্মাণ করুন, যাতে বন্যার পানি ঘরে না উঠে।
  • টিউবওয়েল উঁচু স্থানে স্থাপন করুন, যাতে বন্যার পানিতে ডুবে না যায়, কিংবা বন্যার সময় টিউবওয়েল উঁচু করার ব্যবস্থা করুন।
  • নতুন জেগে উঠা চরে বসতবাড়ি নির্মাণ না করা ভালো, নতুন চরে ঘর বন্যা হলে আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  • বাড়ির আশেপাশে কোথায় আশ্রয়কেন্দ্র আছে, এবং কোথায় মালমাল রাখবেন তা আগে থেকে চিহ্নিত করে রাখুন যাতে বন্যার পানি বেড়ে গেলে মালামালসহ সহজে স্থানান্তর হওয়া যায়।
  • গবাদিপ্রাণী মূল্যবান সম্পদ, এদের রক্ষার জন্য আগে থেকে উঁচু জায়গা কিংবা দুরবর্তী শুকনো জায়গায় পাঠিয়ে দেয়ৃর ব্যবস্থা করুন।
  • বন্যার মাস শুরুর আগে শুকনো খাবার, ফসলের বীজসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মজুদ রাখুন।
  • সাপের কামড় থেকে বাঁচতে নিয়মিত বাড়িঘর এবং আঙ্গিনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও শুষ্ক রাখার পাশাপাশি রাতের বেলা অন্ধকারে চলাচল থেকে বিরত থাকতে হবে। কার্বলিক এসিড রাখলে সাপের উপদ্রব কম হয়। কাছাকাছি কোন হাসপাতালে সাপের কামড়ের চিকিৎসা আছে তা জেনে রাখুন।
  • ছোট শিশুদের সাতাঁর শেখান এবং বাড়ীর চারপাশে বেড়া দিয়ে শিশুদের সুরক্ষা ঢাল তৈরি করুন।
  • এলাকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি বা স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে যোগাযোগ রাখুন এবং তাদের পরামর্শ গ্রহন করুন।
  • বন্যা কবলিত হওয়ার আশংকা আছে এমন পুকুর, দিঘি, ঘেরের নিচু পাড়গুলো উঁচু করে দিন। সম্ভব হলে জাল দিয়ে ঘিরে দিন। যদি দেখা যায় একবোরেই বন্যার পানি প্রবেশ টেকানো সম্ভব না সে ক্ষেত্রে তাৎক্ষনিক মাছ বিক্রি করে ক্ষতি কমিয়ে নিতে পারেন।
  • বাড়ির আশেপাশে ঢোল কলমি, কলাগাছসহ বেশি করে অন্যান্য ফলজ গাছ লাগান, যাতে বন্যার পানির তোড়ে বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

বন্যাকালীন করণীয়

  • নিজ বাড়িতে অবস্থান সম্ভব না হলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিন।
  • অনেক সময় শিশু আর কিশোরীদের দূরে আত্মীয়ের বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এতে তারা আরো অনিরাপদ ও অরক্ষিত হয়ে পড়ে।
  • বন্যার সময় বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে। এই সময় টিউবয়েলের পানি পান করুন, টিউবওয়েলের পানি পাওয়া না গেলে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বা ফিটকিরি ব্যবহার করুন।
  • পরিবারের শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের নিরাপত্তায় বিশেষ নজর দিন।
  • ঘরে কার্বলিক এসিডের বোতলের ছিপি খুলে রাখুন, এতে সাপ ঘরে ঢুকবে না, তাছাড়া কার্বলিক এসিড মিশ্রিত সাবানের টুকরোঘরের চারকোণে ছিটিয়ে রাখলে সাপের উৎপাত কমে যায়।
  • বিভিন্ন দালাল বা অন্য কারো পরামর্শ শুনে ভালো করে খোঁজ খবর না নিয়ে নিজ গ্রাম ছেড়ে নিজে বা পরিবারের কাউকে কাজের সূত্রে শহরে বা অন্যত্র পাঠাবেন না। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযেগ রেখে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ নিন।
  • বন্যার পরই বন্যাকবলিত জমিতে কি ফসল ফলানো যায়, তার চিন্তাভাবনা করুন বা এ নিয়ে কৃষি কমীদের সাথে নিয়মিত আলোচনা ও পরামর্শ নিন।

বন্যা পরবর্তী করণীয়

  • বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে নিজ বাসস্থানে ফিরে যান, ঘরবাড়ি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বসবাসের উপযোগী করে তুলুন, বাড়ির আশেপাশে দ্রুত পরিষ্কার করে গাছ ও সবজি চাষ শুরু করুন।
  • কৃষি কর্মীদের সাথে আলেচনা করে নিজ জমিতে চাষাবাদ শুরু করে দিন ।
  • বন্যার পরপরই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়, তাই নিয়মিত উপজেলা ও জেলা ও নিকতস্থ স্বাস্থ্যকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রাখুন এবং তাদের পরামর্শ মেনে চলুন।
  • বন্যার পানি নামার সাথে সাথে ক্ষতিগ্রস্ত পুকুর বা ঘেরের পাড় মেরামত করে পুকুরে জাল টেনে চাষকৃত মাছ আছে কিনা তা আগে দেখে নিন এবং সংশ্লিষ্ট মৎস্য কর্মকর্তাদের পরামর্শে মাছ চাষ শুরু করুন।
  • বীজ, চারা ও ফসলের চাষ শুরুর জন্য কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
  • ঘরবাড়ি পুননির্মাণের জন্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করুন।