ফেসবুকে একটি পোস্টের জেরে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার আলোচিত সেই ঝুমন দাসকে ফের থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। তবে পুলিশের দাবি, আটক নয়, কেবল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে থানায় নেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে তাকে শাল্লা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম।
তিনি বলেন, রাজশাহীর একটি মন্দিরের গেইটে মসজিদের দানবাক্স লাগানোর বিষয়টি নিয়ে কথিত ঝুমন দাসের ফেসবুকের একটি পোস্ট নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় ডাকা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। আমরা তাকে আটক করিনি, শুধুমাত্র জিজ্ঞাসাবাদ করব। তবে পোস্টটি ঝুমন নিজে শেয়ার করেছিলেন কি না বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এতে ধর্মীয় উস্কানির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঝুমনের ভাই নূপুর দাস বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক উসকানি দেয়ার অভিযোগে পুলিশ আজ (মঙ্গলবার) বেলা ১১টায় তাকে থানায় নিয়ে গেছে। এর আগে দুই দিন ধরে তাকে ফলো করছিল পুলিশ। ‘তার মোবাইল পুলিশ নিয়ে গেছে এবং কিছু পোস্ট রিমুভ দিয়েছে।’
এদিকে ঝুমন দাসের স্ত্রী সুইটি রানী দাস বলেন, ‘৩ দিন ধরে আমাদের গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে, তবে কি কারণে জানি না। আজ সকাল ১১টার দিকে হঠাৎ পুলিশ এসে আমার স্বামীকে নিয়ে যায়। কিন্তু কারণে কেন কিছুই জানি না। শুধু বলেছে থানা যাওয়া লাগবে। আমরা খুব দুশ্চিন্তায় রয়েছি।’
গত বছরের ১৫ মার্চ সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে ‘শানে রিসালাত সম্মেলন’ নামে একটি সমাবেশের আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম। এতে হেফাজতের তৎকালীন আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বক্তব্য দেন।
এই সমাবেশের পরদিন ১৬ মার্চ মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন শাল্লার নোয়াগাঁওয়ের ঝুমন দাস। স্ট্যাটাসে তিনি মামুনুলের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অভিযোগ আনেন।
মামুনুলের সমালোচনাকে ইসলামের সমালোচনা বলে এলাকায় প্রচার চালাতে থাকেন তার অনুসারীরা। এতে এলাকাজুড়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দারা ১৬ মার্চ রাতে ঝুমনকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
পরদিন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর সকালে কয়েক হাজার লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল করে হামলা চালায় নোয়াগাঁও গ্রামে। তারা ভাঙচুর ও লুটপাট করে ঝুমন দাসের বাড়িসহ হাওরপাড়ের হিন্দু গ্রামটির প্রায় ৯০টি বাড়ি, মন্দির। ঝুমনের স্ত্রী সুইটিকে পিটিয়ে আহত করা হয়।
এরপর ২২ মার্চ ঝুমনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে শাল্লা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল করিম।
শাল্লায় হামলার ঘটনায় শাল্লা থানার এসআই আব্দুল করিম, স্থানীয় হাবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল ও ঝুমন দাসের মা নিভা রানী তিনটি মামলা করেন। তিন মামলায় প্রায় ৩ হাজার আসামি। পুলিশ নানা সময়ে শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। তারা সবাই এখন জামিনে। শুধু জামিন পাচ্ছিলেন না ঝুমন দাস। বিচারিক আদালতে পাঁচ দফা তার জামিন আবেদন নাকচ করেন বিচারক। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন অধিকারকর্মী, বুদ্ধিজীবী ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা চলছিল।
এর মধ্যে জামিনের জন্য হাইকোর্টে আবেদন করেন ঝুমন দাস। কারাবন্দির ছয় মাস পর জামিনে মুক্তি পান তিনি।