ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হওয়া প্রীতম দাশের মুক্তি চেয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৪৯ জন নাগরিক। শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) তারা এ বিবৃতি দেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৭ আগস্ট মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চা শ্রমিকদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে ‘রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন’ মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সমাবেশ করলে সেখানে স্থানীয় ছাত্রলীগের একাংশ হামলা চালায়। এর প্রতিবাদে ২৯ ও ৩০ আগস্ট শ্রীমঙ্গলে দুটি সংবাদ সম্মেলন করে ‘রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন’ হামলাকারীদের বিচার দাবি করে। প্রীতম দাশ সে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েছিলেন।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনের পরপর স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মীরা প্রীতম দাশের পুরনো ফেসবুক স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট ভাইরাল করে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনে। প্রীতম দাশের ফেসবুকে শেয়ারকৃত বিখ্যাত উর্দু সাহিত্যিক সাদাত হোসেন মান্টোর একটি উদ্ধৃতিকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ছাত্রলীগ একটি সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। উল্লেখ্য, প্রীতমের আগে ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন ও সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমানসহ অনেকেই এই উদ্ধৃতিটি প্রচার করেছেন।
পরবর্তীতে স্থানীয় মসজিদসমূহের ইমাম এবং স্থানীয় সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সেই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা প্রতিরোধ করা গেলেও প্রীতম দাশকে নিরাপত্তা দেয়ার বদলে উল্টো তাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের এক কর্মীর ‘রাষ্ট্র ও ধর্ম অবমাননা’র অভিযোগে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতা প্রীতম দাশকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে ভিন্নমত ও আন্দোলন দমানোর জন্য সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টি এবং সেটা ভণ্ডুল হয়ে গেলে ডিজিটাল নিরাপত্তার আইনের মতো নিপীড়নমূলক আইনের মাধ্যমে হয়রানি করার এমন নগ্ন নজিরে আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা দেখতে পাচ্ছি, প্রকাশ্য ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারণে গ্রেফতারকৃত প্রীতম দাশকে রিমাণ্ডে নেয়ার জন্যও আবেদন জানানো হয়েছে।
আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, একদিকে রাষ্ট্র ভিন্নমত দমনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো চরম সমালোচিত এবং কুখ্যাত আইনকে ব্যবহার করছে, অন্যদিকে দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে সমাজের ভেতর সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি তৈরিতে ক্ষমতাসীনরাই মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। ক্ষমতাসীনদের এমনতর কর্মকাণ্ড সমাজের ভেতর এক ভয়াবহ ফাটল ও অস্থিরতা তৈরি করছে বলে আমরা মনে করি।
এমতাবস্থায় আমরা দাবি জানাচ্ছি, অবিলম্বে প্রীতম দাশসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বন্দিদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে এবং মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। প্রীতম দাশকে রিমান্ডের মাধ্যমে অযথা হয়রানি ও নির্যাতন করা যাবে না। পাশাপাশি অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো নিপীড়নমূলক আইনগুলো বাতিল করে বাকস্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।
বিবৃতিকারীরা হলেন- আনু মুহাম্মদ, অর্থনীতিবিদ ও প্রাক্তন অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট, জোবাইদা নাসরিন, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, আইনুন নাহার, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, মোশাহিদা সুলতানা ঋতু, শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মাহা মির্জা, লেখক ও গবেষক, সাইদিয়া গুলরুখ, সাংবাদিক এবং গবেষক, ফরিদা আখতার, নারী নেত্রী, শিরিন হক, সদস্য, নারীপক্ষ, জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ট্রাস্টি, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রধান নির্বাহী, বেলা, সুব্রত চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট, মো. নুর খান লিটন, মানবাধিকারকর্মী, মানস চৌধুরী, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাকি বিল্লাহ, লেখক ও রাজনৈতিক কর্মী, রাশেদ শাহরিয়ার, সাধারণ সম্পাদক, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, দিলীপ রায়, সাধারণ সম্পাদক, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, নজির আমিন জয়, সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, অনিক রায়, সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, আরিফ মাইনুদ্দিন, সভাপতি, কেন্দ্রীয় কমিটি, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, তাওফিকা প্রিয়া, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলন, সৈকত আরিফ, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, সুনয়ন চাকমা, সভাপতি, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, অভিনু কিবরিয়া, সহ সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ, বীথি ঘোষ, সংস্কৃতিকর্মী, ফয়জুল হাকিম, সম্পাদক, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, শহিদুল ইসলাম সবুজ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কমিটি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, অ্যাডভোকেট তবারক হোসাইন, সহ সভাপতি, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, ফাহমিদুল হক, লেখক ও গবেষক, হানা শামস আহমেদ, গবেষক, প্রফেসর ড. হারুণ অর রশিদ, চিকিৎসক, আসিফ নজরুল, অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বীণা ডি কস্তা, অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, অস্ট্রেলিয়া ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রোজিনা বেগম, মানবাধিকারকর্মী, জান্নাতুল মাওয়া, আলোকচিত্রী ও শিক্ষক, সীমা দত্ত, সভাপতি, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্র, আবদুল্লাহ আল নোমান, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, আরিফুজ্জামান তুহিন, সাংবাদিক, রহমান মুফিজ, কবি, ফারুক ওয়াসিফ, লেখক ও সাংবাদিক, সৈকত আমিন, কবি ও সাংবাদিক, মনিরা শরমিন, সহকারী অধ্যাপক, গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, তাসাফি হোসেন, প্রতিষ্ঠাতা, বহ্নিশিখা, ফেরদৌস আরা রুমী, উন্নয়নকর্মী, জাকির হোসেন, মানবাধিকারকর্মী, রেজাউল করিম চৌধুরী, কোস্টবিডি এবং আলমগীর কবির, কো অর্ডিনেটর, গ্রীণ ভয়েস।