পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এমপি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষকের মুখে স্থায়ী হাসি দেখতে চান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিয়মিত হাওড় অঞ্চলের কার্যক্রম মনিটরিং করছেন। হাওড়ের কৃষকের ফসল ঘরে তুলে দেওয়াই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। কৃষি ও কৃষকবান্ধব সরকার প্রধান হিসেবে জননেত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বসেরা।
বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার নজরখালী বাঁধ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এমনকি বাংলাদেশি খাদ্য ও কৃষি পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা হয়। দেশের কৃষিতে হাওরের মানুষের অনেক অবদান রয়েছে। তিনি হাওরের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য কাজ করছেন।
এনামুল হক শামীম বলেন, কৃষি উন্নয়নে বর্তমান সরকারের উদ্যোগে প্রায় ২ কোটি কৃষককে কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড দেওয়া হয়েছে। কৃষককে মাত্র ১০ টাকায় ব্যাংক একাউন্ট খোলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সারের দাম কয়েক দফা কমিয়ে বর্তমানে সারের দাম ইউরিয়া ২২ টাকা কেজি, টিএসপি ২২ টাকা কেজি, ডিএপি ১৬ টাকা, এমওপি ১৫ টাকা কেজি। আর বিএনপির সময়ে ছিল টিএসপি ৮০ টাকা, এমওপি ৭০ টাকা, ডিএপি ৯০ টাকা, ইউরিয়া ২০ টাকা কেজি।
তিনি বলেন, সারে অন্যান্য বছরে ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হলেও এ বছর রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারের দাম বেড়ে গেছে, ভর্তুকি দিতে হচ্ছে ২৮ হাজার কোটি টাকা। তারপরও সারের কোনো ঘাটতি নেই। কৃষি প্রণোদনা ও পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় প্রতি বছর কয়েক লাখ কৃষককে বিনামূল্যে ভালো মানের উন্নত জাতের বীজ, সার ও অন্যান্য উপকরণ দেওয়া হচ্ছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প চলমান রয়েছে যার আওতায় ৫০ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশ। ভর্তুকি মূল্য কৃষি যন্ত্রপাতি দেওয়া হচ্ছে। নড়িয়া উপজেলাসহ সারা বাংলাদেশে কৃষি উন্নয়নের জন্য প্রায় ৫০টি প্রকল্প চলমান রয়েছে যার আওতায় বিনামূল্যে বীজ, সার, ফলের চার, সেচ যন্ত্র বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বে ধান উৎপাদনে ৩য়, সবজি উৎপাদনে ৩য়, আম উৎপাদনে ৭ম, কাঁঠাল উৎপাদনে ২য়, আলু উৎপাদনে ৭ম, পেয়ারা উৎপাদনে ৮ম, ফসলের জাত উদ্ভাবনে প্রথম, পাট উৎপাদনে ২য়। মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে ৩য়, ইলিশ উৎপাদনে প্রথম। বর্তমান সরকার কৃষি গবেষণা জোরদার করছে। ফলে ধান, গম, পাট, সবজি ও ফলের কয়েক শত উন্নত জাত উদ্ভাবন ও কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারণ হয়েছে। বর্তমানে শুধুমাত্র ধানের উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড জাত রয়েছে ১০০ টির উপরে।
এনামুল হক শামীম বলেন, প্রধানমন্ত্রী আগামীর বাসযোগ্য বিশ্বমানের বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ডেল্টাপ্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন। আর এই মহাপরিকল্পনার ৮০ ভাগ কাজই পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করবে। এটি বাস্তবায়িত হলে সারাদেশে নদীভাঙন ও জলাবদ্ধতার কোনো সমস্যাই থাকবে না।
উপমন্ত্রী আরও বলেন, হাওড় অঞ্চল রক্ষায় স্থায়ী প্রকল্প করা হচ্ছে। আর নদীভাঙন ঠেকাতে সারা দেশে বিভিন্ন স্থায়ী প্রকল্প চলমান রয়েছে এবং নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। এছাড়াও সারাদেশে নদীভাঙন এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে স্থায়ী বাঁধ করা হচ্ছে, বাঁধ প্রশস্তকরণ হচ্ছে, বনায়নও করা হচ্ছে। যেখানে যা করা প্রয়োজন, তাই করা হচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জনগণের সঙ্গে কথা বলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সুনামগঞ্জে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সব কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করা হয়েছেন। ২৬ জন কর্মকর্তা নিয়মিত কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবেন। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আগামী ৭ মার্চ এখানেই অফিস করবেন। কোনো গাফিলতি সহ্য করা হবে না।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মল্লিক সাঈদ মাহবুব, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এস এম শহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী খুশী মহন সরকার, জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহসান শাহ প্রমূখ।
পরে উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও সুধীজনদের সাথে মতবিনিময় সভা করেন।