মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার শ্রীপুর উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিতে মৌলভীবাজার কাশীনাথ আলাউদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের যৌন কেলেঙ্কারির দায়ে বরখাস্তকৃত শিক্ষক মো. আইয়ুব আলীকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত ২৯ আগস্ট শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। নিয়োগ পরীক্ষায় প্রধান শিক্ষক পদে মোট ৭ জন ও সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে ৪ প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান শিক্ষক পদের প্রার্থীরা হলেন- মহতোছিন আলী উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আতিকুর রহমান সোহেল, ছকাপন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক অর্জুন চক্রবর্তী, জালালাবাদ উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল হাই ও মৌলভীবাজার কাশীনাথ আলাউদ্দীন উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের বরখাস্তকৃত মো. আইয়ুব আলীসহ মোট ৭ জন।
এর মধ্যে বরখাস্তকৃত শিক্ষক মো. আইয়ুব আলীকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অনিয়ম ও দুর্নীতি করে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মো. আছকর আলী।
ওই লিখিত অভিযোগে ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের চারজন ইউপি সদস্যসহ আরও ৩৫ জন স্বাক্ষর করেন। যার অনুলিপি দেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সিলেট অঞ্চলের উপ-পরিচালক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে।
নিয়োগ বোর্ডের পাঁচজন সদস্য হলেন- বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম খাঁন বাচ্চু, ডিজি’র প্রতিনিধি মৌলভীবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মইনুল হক, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনোয়ার, বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শতদল দে ও শিক্ষানুরাগী সদস্য মাওলানা আবুল হাসান।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, যাকে (আইয়ুব আলী) প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তিনি মৌলভীবাজার কাশীনাথ আলাউদ্দীন উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ থাকাবস্থায় ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন। অধ্যক্ষ মো. আইয়ুব আলী বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নানা ধরণের শাস্তি বা পরীক্ষায় ফেল করানোর ভয় কিংবা পরীক্ষায় প্রশ্ন বলে দেয়া ও মোবাইলে ফ্লেক্সিলোড বা নগদ টাকার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের সঙ্গে অপকর্ম (যৌন হয়রানি) করেন। পরবর্তীতে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় কলেজ গভর্নিং বডির সকল সদস্যের সর্বসম্মতিক্রমে তাকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকে রেজ্যুলেশন করে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়। যৌন হুয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত ও বরখাস্তকৃত ব্যক্তির কাছ থেকে নিয়োগ বোর্ড মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাকে এই নিয়োগ প্রদান করায় এলাকাবাসী এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ আতঙ্কের মধ্যে আছেন। কোনো অবস্থাতেই প্রধান শিক্ষক হিসেবে তাকে মেনে নিতে পারছেন না স্থানীয়রা। তাকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ায় বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাই তারা এই নিয়োগ বাতিলের দাবি জানান।
অভিযোগকারী ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. আছকর আলী বলেন, যাকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, শুনেছি তিনি যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনায় বরখাস্ত হয়েছিলেন। তার অতীত ইতিহাস জেনে তাকে আমাদের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে মেনে নিতে পারছি না।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মো. আইয়ুব আলী বলেন, কাশীনাথ আলাউদ্দীন উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে ওইসময় আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছিল সেটা আমি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান করে অব্যাহতিপত্র জমা দেই। এখন নতুন করে আমি শ্রীপুর স্কুলে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে ১ম স্থান অর্জন করে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম খাঁন বাচ্চু জানান, নিয়োগ পরীক্ষা নিয়মতান্ত্রিকভাবে স্বচ্ছ হয়েছে। এখানে আর্থিক লেনদেন, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ভিত্তিহীন।
যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনায় বরখাস্তকৃত শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগে ওই শিক্ষক কী অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন সেটা আমাদের জানার বিষয় না। সেটা ছিল তার ব্যক্তিগত বিষয়। নিয়োগ বোর্ড তার সমস্ত কাগজাদি দেখে তাকে পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দিয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনোয়ার বলেন, প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা শেষে ভাইবা পরীক্ষা ও সার্টিফিকেটের নম্বর যোগ করে যে প্রার্থী সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছেন তাকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
নিয়োগ পরীক্ষায় ডিজি’র প্রতিনিধি ও মৌলভীবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মইনুল হক জানান, সরকারি বিধি মোতাবেক স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এখানে অনিয়মের কোনো সুযোগ ছিল না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহমুদুর রহমান খোন্দকার জানান, অভিযোগের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে খতিয়ে দেখা হবে।