অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ এবং যথাযথ চিকিৎসেবার মান বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কারণ, পারমাণবিক পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে দেশের দরিদ্র ও সাধারণ মানুষকে ন্যূনতম খরচে উন্নত সেবা দেওয়া সম্ভব হবে, যা পরোক্ষভাবে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে।
ঢাকা জেলার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মিটফোর্ড হাসপাতাল, কুমিল্লার সদর, ফরিদপুরের সদর, বরিশালের সদর এবং বগুড়ার সদর উপজেলা এলাকায় এ সেবার মান বাড়াতে ‘ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেসে’র (ইনমাস) সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতায় গৃহীত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) লক্ষ্যমাত্রা ৩.৪ অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ এবং যথাযথ চিকিৎসেবা প্রদানের মাধ্যমে অসংক্রামক রোগ থেকে অকালমৃত্যু এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনার জন্য প্রচেষ্টা চালানো হবে। ইনমাসগুলোয় আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন ও চিকিৎসাসেবার মানোন্নয়নে অবকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি সরকারের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও এসডিজির সঙ্গে প্রকল্পটি সংগতিপূর্ণ বলেও মনে করে পরিকল্পনা কমিশন। এ কারণে গত ১৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পেয়েছে।
এর বাইরেও সরকার আরও পাঁচটি কারণে ইনমাস প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে। এগুলো হলো—(ক) ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস (ইনসাম) মিটফোর্ড, কুমিল্লা, ফরিদপুর, বরিশাল ও বগুড়ার জন্য কিছু নতুন আধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করা এবং রোগীর সেবা কার্যক্রম বাড়ানোর লক্ষ্যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা, (খ) দেশের দরিদ্র ও সাধারণ মানুষকে ন্যূনতম খরচে এবং উন্নত পারমাণবিক চিকিৎসাসেবা প্রদান করা, (গ) ইনস্টিটিউটগুলোর রোগ নির্ণয়ে সামর্থ্য বাড়ানো এবং রোগীর নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা উন্নত করা, (ঘ) পারমাণবিক পদ্ধতির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা দ্বারা দেশের দারিদ্র্য বিমোচন ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখা এবং (ঙ) সংশ্লিষ্ট ইনমাসগুলোর চিকিৎসক, পদার্থবিদ, রসায়নবিদ এবং অন্য বিজ্ঞানীদের গবেষণা কার্যক্রমের সুযোগ প্রসারিত করা।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র আরও জানিয়েছে, ২১৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ইনমাস প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি ডিএসসিসির মিটফোর্ড, কুমিল্লার সদর, ফরিদপুরের সদর, বরিশালের সদর ও বগুড়ার সদর উপজেলা এলাকাজুড়ে বাস্তবায়ন করা হবে।
একনেক সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ১০৩টি বৈদেশিক যন্ত্রপাতি, ৬২৮টি স্থানীয় যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম কেনা হবে। আসবাব সংগ্রহ করা হবে ৭৬৯টি। ২৩ হাজার ২১৭ বর্গমিটার অফিস ভবন নির্মাণ ও সংস্কার করা হবে। প্রকল্পটি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল।
একনেক সূত্র আরও জানায়, রোগীর সেবা কার্যক্রম বাড়ানোর লক্ষ্যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হবে। পারমাণবিক পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে দরিদ্র ও সাধারণ মানুষকে ন্যূনতম খরচে উন্নত সেবা দেওয়া হবে। এতে দেশের মুদ্রা সাশ্রয় ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে।
সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য ২০২২ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০২৫ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একনেকে অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে জোর দেওয়া হচ্ছে। এটি বাস্তবায়িত হলে দরিদ্র ও সাধারণ মানুষ ন্যূনতম খরচে উন্নত চিকিৎসাসেবা পাবে, যা পরোক্ষভাবে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে।