পরিবারতন্ত্র গিলে খাচ্ছে সুনামগঞ্জ আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনগুলো। মূল সংগঠন ও সহযোগী সংগঠনে শীর্ষ নেতাদের আত্মীয়স্বজন পদপদবি ভাগিয়ে নেয়ায় বাদ পড়ছেন অনেক ত্যাগী নেতা।
সিলেট ভয়েসের অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সিনিয়র সহ সভাপতি (এক পক্ষের দাবি অব্যাহতিপ্রাপ্ত) ও সাধারণ সম্পাদকের পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়স্বজন দলীয় আধিপত্য বিস্তারের জন্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বড় বড় পদ দখল করে আছেন। তাদের পদপদবির দাপটে সাধারণ নেতাকর্মীরা অনেকটা অসহায়। প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মুখও খুলে না কেউ।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমানের যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী পুত্র মশিউর রহমান জুয়েল জেলা কমিটির সদস্য। সভাপতির পুত্র সর্বশেষ কবে দলীয় কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন নেতাকর্মীদের কেউ নিশ্চিত করতে পারেন নি।
সিনিয়র সহ সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান (এক পক্ষের দাবি অব্যাহতিপ্রাপ্ত) নুরুল হুদা মুকুটের স্ত্রী হোসনা হুদা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। রাজপথে কখনও তাকে দেখা না গেলে বছর কয়েক আগে আচমকা ভাগিয়ে নিয়েছেন পদ। মুকুটের সহোদর খায়রুল হুদা চপল জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও সদর উপজেলা পরিষদের আহ্বায়ক। যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি একটি পক্ষকে বাদ দিয়ে নিজ বলয়ের মানুষদের নিয়ে গঠন করার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে।
মুকুটের ভাগ্নি সৈয়দা ফারহানা ইমা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ভাগনে সৈয়দ ইমন সুনামগঞ্জ পৌর যুবলীগের পদবিধারী নেতা। তাঁর নিকটআত্মীয় সেলিনা আবেদীন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও রওনক আহমদ জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন। এছাড়া মুকুটের নিজ এলাকা শহরের তেঘরিয়ার অনেকেই এখন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের কমিটিতে স্থান পেয়েছেন।
পিছিয়ে নেই জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমনও। তিনিসহ তাঁর আরও দুই ভাইয়ের ঠাঁই হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে। তাঁর দুই বড় ভাই খায়রুল কবির রুমেন জেলা কমিটির সহ সভাপতি, ফজলুল কবির তুহিন কমিটির সদস্য। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের জেলা কমিটিগুলোতে এর আগে কখনও তিন ভাই এক সঙ্গে কমিটিতে স্থান পান নি।
এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক পদে ছাতক পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী এবং তাঁর ছোট ভাই শামীম আহমেদ চৌধুরী তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক পদে আছেন। জেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম সহ সভাপতি আফতাব উদ্দিনের পাশাপাশি জেলা কমিটিতে মহিলা বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে আছেন তাঁর মেয়ে নিগার সুলতানা কেয়া।
জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি সম্পাদক করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুলের পাশাপাশি তাঁর ছোট ভাই অমল চৌধুরী হাবুলও জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরি কমিটির সদস্য।
ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুনামগঞ্জ-১আসনের সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। তাঁর ছোট ভাই মোজাম্মেল হোসেন রোকন ধর্মপাশা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি।
জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সেলিম আহমদ। তাঁর বড় ভাই নিজাম উদ্দিন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ছোট ভাই রয়েল আহমদ জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে সহ সভাপতি হিসেবে স্থান পেয়েছেন। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আসাদুজ্জামান সেন্টু, সিতেশ তালুকাদার মঞ্জু, কল্লোল তালুকদার চপল, আজাদুল ইসলাম রতন জেলা যুবলীগের কমিটিতেও পদবি নিয়ে বসে আছেন। তারা আওয়ামী লীগ না যুবলীগ নেতা এ নিয়ে অনেক সময় বিভ্রান্তিতে পড়েন দলীয় নেতাকর্মীরা।
জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক তিন সভাপতি জিতেন্দ্র তালুকদার পিন্টু, আক্তারুজ্জামান সেলিম, তনুজ কান্তি দে, সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি মণীষ কান্তি দে মিন্টু’র মত সাবেক ত্যাগী ছাত্রলীগ নেতাদের যুবলীগ, আওয়ামী লীগে স্থান হয়নি। প্রবীণদের মধ্যে আলী আমজাদ, মতিউর রহমান পীর, সুরমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজা, অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম শেফু, অ্যাডভোকেট চাঁন মিয়া, জসিম উদ্দিন দিলীপ, অ্যাডভোকেট শুক্কুর আলীর মত অনেকেই পদবি ছাড়াই দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। পরিবারতন্ত্র, স্বজনপ্রীতি সুনামগঞ্জের আওয়ামী রাজনীতি গিলে খাচ্ছে।
এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায় নি।