ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের ফলে ১৭ বছর পর পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে দেশব্যাপী যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন করবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যার পর দেশব্যাপী সৃষ্ট টালমাটাল পরিস্থিতির অবস্থান এইদিনে এক মহান সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
এর ফলে অরাজকতা থেকে দেশ ক্ষমতার স্বাভাবিক হতে শুরু করে আর ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুকে আসেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার সমরনায়ক জিয়াউর রহমান।
দিবসটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন না করা হলেও জাকজমকভাবে দেশব্যাপী নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। এছাড়াও দিবসটি পালনে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশও।
১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ক্ষমতায় আসেন খন্দকার মোশতাক। মাত্র তিনমাসের মধ্যে সেনাবাহিনীর মধ্যে বিদ্রোহ করে খন্দকার মোশতাককে উৎখাত করেন ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ।
তখন গৃহবন্দী করা হয় মুক্তিযুদ্ধের বীরউত্তম ও তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে এবং খালেদ মোশাররফ নিজে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
টালমাটাল এ পরিস্থিতির মধ্যেই ৬ নভেম্বর রাতে তৎকালীন রাজনৈতিক দল জাসদ অনুগত কর্নেল আবু তাহেরের নেতৃত্বে বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা বিপ্লব ঘোষণা করে। বিপ্লবী সৈনিক ও জনতা জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করেন।
এর ফলে চারদিনের শূন্যতার অবসান হয়, ঢাকার রাজপথে সিপাহি এবং জনতা একসঙ্গে নেমে আসে। সেনা ট্যাঙ্কে ফুলের মালা পরিয়ে জনগণ সিপাহি বিপ্লবকে অভিনন্দন জানায় এবং বেতারে ‘আমি জিয়া বলছি’ ভাষণ শুনতে পায় দেশবাসী।
এরপর কর্নেল তাহের ও জাসদ বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র কায়েমের চেষ্টা করলে জিয়াউর রহমান নিজে সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বিপ্লব ও সংহতি দিবস বাতিল করে। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় ফিরে আবারও দিবসটি সরকারিভাবে পালন শুরু করে। ২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে সরকারিভাবে পালিত হয়। তবে পরের বছর ছুটি ছিল না। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ফিরে ২০০৯ সাল থেকে দিবসটি ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ নামে পালন শুরু হয়।
গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ আমলের আটটি দিবস বাতিল করলেও, ৭ নভেম্বরকে সরকারিভাবে পালনের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দিবসটি উপলক্ষে দেয়া বাণীতে বলেছেন, ‘৭ নভেম্বর জাতীয় জীবনের ঐতিহাসিক অবিস্মরণীয় দিন। এই পট পরিবর্তনে রাষ্ট্রপতি জিয়ার নেতৃত্বে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ শক্তিশালী সত্তা লাভ করে। গণতন্ত্র অর্গলমুক্ত হয়ে অগ্রগতির পথে এগিয়ে যায়।’
পৃথক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘৭ নভেম্বরের চেতনায় বহুদলীয় গণতন্ত্র নিশ্চিত করা, স্বাধীনতার সুফল তথা অর্থনৈতিক মুক্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে।’
দিবসটি উপলক্ষে আজ (বুধবার) ভোর ৬টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। বেলা ১১টায় জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাকর্মী।
এছাড়াও দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন নিজ নিজ উদ্যোগে আলোচনা সভা ও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) উদ্যোগে আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জাতীয় শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে।
আগামীকাল শুক্রবার রাজধানীতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও সিলেটসহ দেশের প্রতিটি জেলায় বর্ণাঢ্য র্যালী আয়োজন করা হয়েছে।
বিএনপি ছাড়াও যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালনের আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
দিবস উপলক্ষে আজ আলোচনা সভা করবে দলটি। গতকাল জামায়াত আমির বিবৃতিতে বলেছেন, পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর খালেদ মোশাররফের পাল্টা অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় ফেরানোর ষড়যন্ত্র দেশপ্রেমিক সিপাহি ও জনতা প্রতিহত করে। একইভাবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা তাজা প্রাণ ও রক্তের বিনিময়ে দেশকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদমুক্ত করেছে।