পরশ-তাপসকে মঞ্চে ডেকে কাঁদলেন প্রধানমন্ত্রী

১৫ আগস্ট উপলক্ষে আয়োজিত শোক সভায় নির্মম সেই হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করে মঞ্চে বক্তৃতা করার সময় কেঁদেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তব্যের শুরুতে দুইভাই শেখ ফজলে শামস পরশ এবং শেখ ফজলে নূর তাপসকে মঞ্চে ডেকে নেন তিনি। এসময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণ সভায় মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) এই দৃশ্য দেখা যায়।

সেই হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির জীবনে সবচেয়ে কলঙ্কময় অধ্যায়। এই হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশে ঘটেছে।’

এসময় যুবলীগের চেয়ারম্যান পরশ এবং মেয়র তাপসকে কাছে ডেকে বলেন, ‘আয় এদিকে আয়।’

মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার সময় পরশ এবং তাপস একে-অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদেন।

প্রধানমন্ত্রীও তখন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আজকে ওরা বড় হয়ে গেছে। পাঁচ বছরের পরশ। তিন বছরের তাপস। বাবা-মায়ের লাশ গুলি খেয়ে পড়ে আছে। দুটি বাচ্চা পাশে গিয়ে চিৎকার করছে। বাবা ওঠো, বাবা ওঠো। মা ওঠো, মা ওঠো। সাড়া দেয়নি।’

‘আমার ফুফু বাড়িতে। ফুফু গুলিবিদ্ধ। ফুফাতো দুইবোন গুলিবিদ্ধ। কী নিষ্ঠুর-নির্মম ঘটনা ঘটেছে, আপনারা একবার চিন্তা করে দেখেন। সেই হত্যাকাণ্ডের পর বিচার চাওয়ার কোনো অধিকার ছিল না আমাদের। মামলা করার অধিকার ছিল না। আমি আর রেহানা বিদেশে ছিলাম। সেজন্য বোধহয় বেঁচে গিয়েছিলাম। এই বাঁচা কী দুঃসহ বাঁচা, সেটা শুধু ভুক্তভোগীরাই জানে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৬ তারিখ পর্যন্ত লাশ পড়ে ছিল ৩২ নম্বরে। আজকে অনেকের অনেক কথা শুনি, আমি এখন সরকারে আছি, মানবাধিকারের কথা শোনায় আমাদেরকে। মানবাধিকার নিয়ে আমাদের তত্ত্বজ্ঞান দেয়। এরকম তো কত জনের কথাশুনি।’

‘আমার কাছে যখন একথা বলে বা দোষারোপ করে তারা কি একবার ভেবে দেখেছে আমাদের মানবাধিকার কোথায় ছিল, যখন আমরা স্বজন হারিয়েছি। কেঁদে বেড়িয়েছি। এই যে পরশ, তাপসের কী অবস্থা ছিল তখন…কোনো আশ্রয়ই তো ছিল না তাদের। দূরের আত্মীয়-স্বজন স্থান দিয়েছে তাদের। কারণ আমাদের সবাইকে তো মেরে ফেলেছে। কে আশ্রয় দেবে। কারো প্রতি আমি দোষারোপ করি না। কিন্তু এই বাংলাদেশেই এই ঘটনা ঘটেছে, এটা মনে রাখতে হবে। আমরা যারা স্বজন হারিয়েছি, তারা তো হারিয়েছি। কিন্তু আমি ভাবি, আমার দেশ কী হারিয়েছিল?