বুদ্ধপূজা, শোভাযাত্রা, প্রদীপ প্রজ্বলন এবং সমবেত প্রার্থনা সহ নানা কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে সিলেটে পালিত হয়েছে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা। দিনটি মহামতী গৌতম বুদ্ধের জন্ম, বোধি লাভ ও নির্বাণ লাভের স্মৃতিবিজড়িত। আড়াই হাজার বছরের বেশি সময় আগে গৌতম বুদ্ধ এ দিনে বিশ্বের শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সত্য অনুসন্ধানে সিংহাসনের মায়া ছেড়ে গৃহত্যাগ করেছিলেন। সারাবিশ্বের বৌদ্ধ অনুসারী কোটি কোটি ভক্ত বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভক্তিতে পালন করেছে দিনটি।
বুধবার (২২ মে) শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে সিলেট বৌদ্ধ সমিতির উদ্যোগে নগরীর আখালিয়া, নয়াবাজার ব্রাক্ষণশাসনে অবস্থিত সিলেট বৌদ্ধ বিহারে দিনব্যাপী কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘মারামারি, হানাহানি, ঝগড়া-বিভেদ, অসহিষ্ণুতা ত্যাগ করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই গৌতম বুদ্ধের শিক্ষা।’
মেয়র বলেন, দেশে সকল ধর্মাবলম্বীদের সুন্দর সহাবস্থান বিরাজ করছে। সকল ধর্মই সমাজে শান্তি শৃংঙ্খলা বজায় রাখতে নির্দেশনা দেয়। ধর্ম মানুষের কল্যাণ বয়ে আনে। তাই আমাদেরকে নিজ নিজ ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা রাখতে হবে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একে অপরের প্রতি আন্তরিক হয়ে কাজ করতে পারলেই সমাজে শান্তি-শৃংঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব হবে। বক্তব্যের পরিশেষে তিনি বৌদ্ধ বিহারের পেছনের যে জায়গাটি পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে সেটিও উদ্ধারের তিনি আশ্বাস দেন।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা জেলা মেজিস্ট্রেট ইমরুল হাসান।
আলোচনা সভায় বাংলাদেশ বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ সংঘানন্দ মহাথের এর সভাপতিত্বে এবং কবি উদয়ন বড়ুয়া এবং ইমন বড়ুয়ার যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে উদ্বোধনী ভাষণ প্রদান করেন সিলেট বৌদ্ধ সমিতির সভাপতি বাবু নিশুতোষ বড়ুয়া। পঞ্চশীল প্রার্থনা করেন সমিতির উপদেষ্টা বাবু অরুণ বিকাশ চাকমা।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাবু জগদীশ চন্দ্র দাশ, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি রজত কান্তি গুপ্ত, সিলেটের চট্টগ্রাম সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবু বিশ্বনাথ ঘোষ (বিশু)।
বুদ্ধপূর্নিমা উপলক্ষে কেক এবং ফুল দিয়ে যথাক্রমে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. জাকির হোসেন খান এবং জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন।
মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম থেকে আগত বাবু নয়ন বড়ুয়ার নেতৃত্বে বুদ্ধ কীর্তন পরিবেশন করেন নবজাগরণ বুদ্ধ কীর্তনীয়া পরিষদ চট্টগ্রাম।
২য় পর্বে প্রধান ধর্ম দেশক হিসেবে ছিলেন চারি মহাতীর্থ আন্তর্জাতিক ভাবনা কেন্দ্র, রামু কক্সবাজার এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক শ্রীমৎ প্রজ্ঞা সত্য থেরো। আরো ধর্ম দেশনা করেন বিবেকারাম বিহার, রামুর উপাধ্যক্ষ প্রজ্ঞা সুমঙ্গল থেরো, কুতুপালং ধর্মাংকুর বিহারের আবাসিক ভিক্ষু ইন্দ্রপ্রিয় ভিক্ষু, কুতুপালং বোধিদ্রুম বিহারের উপাধ্যক্ষ সুবোধ প্রিয় ভিক্ষু। সম্পাদকীয় প্রতিবেদন পেশ করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবু পলাশ বড়ুয়া।
জাতীয় এবং ধর্মীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে বুদ্ধপূজা, সংঘদান, অষ্টপরিকখ্রা দান, সমবেত প্রার্থনা ও দেশনা শ্রবণ, মধ্যাহ্নভোজ, ভিক্ষুসংঘের পিন্ডদান ও বিকেলে মঙ্গলাচরণ, প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।