নানকার বিদ্রোহের রূপকার অজয় ভট্টাচার্যের মৃত্যুবার্ষিকীতে এনডিএফ’র শ্রদ্ধাঞ্জলি

ঐতিহাসিক নানকার বিদ্রোহের সংগঠক, সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদ বিরোধী কমিউনিস্ট বিপ্লবী নেতা কমরেড অজয় ভট্টাচার্যের ২৫-তম মৃত্যুবার্ষিকীতে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সিলেট জেলা শাখা ১৩ অক্টোবর’২৪ সকাল ৮টায় সিলেট নগরীর চালিবন্দরস্থ মহাশ্মশান ঘাটে তাঁর শেষকৃত্যস্থলে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন ও সংক্ষিপ্ত আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট শাহপরান থানা কমিটির সভাপতি খোকন আহমদ, জাতীয় ছাত্রদল সিলেট জেলা শাখার আহবায়ক শুভ আজাদ (শান্ত), জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এনডিএফ) সিলেট জেলা কমিটির দপ্তর সম্পাদক রমজান আলী পটু, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ সিলেট জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সরকার। আলোচনা সভা শেষে শপথ বাক্য পাঠ করান জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সিলেট জেলা কমিটির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মো. ছাদেক মিয়া।

বক্তারা বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তী এক দফার দাবিতে সংগঠিত আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতন হলেও স্বৈরতান্ত্রিক বৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থা অক্ষুন্ন রেখে সাম্রাজ্যবাদের পরিক্ষিত দালাল ক্ষমতায় এসে স্বৈরতন্ত্রকেই পাকাপোক্ত করছে। প্রতিষ্ঠিত অন্তবর্তীকালীন সরকার হোক, নির্বাচিত বা অন্য কোন সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক তাতে বৈষম্য, দুর্নীতি ও স্বৈরাচার ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটবে না। কারণ প্রচলিত রাষ্ট্রব্যবস্থা হচ্ছে দুর্নীতি, দমন-পীড়ন, শোষণ-লুণ্ঠন ও স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠার উৎস। বাংলাদেশ হল একটি নয়া ঔপনিবেশিক আধাসামন্তবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা। এ ধরনের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় কার্যকরী থাকে সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের দেশীয় দালাল, সামন্ত-আমলা মুৎসুদ্দি শ্রেণির স্বার্থ সংরক্ষণ করার বিষয়। সাম্রাজ্যবাদী লগ্নিপুঁজি দ্বারা এদেশের সস্তা শ্রমশক্তি, জাতীয় সম্পদ, কৃষিপণ্য ইত্যাদি বেপরোয়াভাবে লুণ্ঠন চালিয়ে রাষ্ট্র ও জন-জীবনকে নিঃস্ব করে দেয়। দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে জনজীন আজ বিপর্যস্থ। গোটা পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থা গভীর অর্থনৈতিক সংকট ও মন্দা পরিস্থিতির ভিতর দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে।’

বক্তারা আরও বলেন, ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ইন্দোপ্যাসিফিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থল সংযোগসেতু হিসেবে এবং প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরের সংযোগকারী মালাক্কা প্রণালী সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক ও রণনীতিগত গুরুত্বের প্রেক্ষিতে সাম্রাজ্যবাদী উভয়পক্ষ বাংলাদেশকে নিজ নিজ পক্ষে যুদ্ধে সম্পৃক্ত করতে চায়। বৈশ্বিক মন্দা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে মহামন্দার দিকে ধাবিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্ধে বাজার ও প্রভাব বলয় পুর্নবন্টন নিয়ে মুদ্রাযুদ্ধ, বাণিজ্যযুদ্ধ, আঞ্চলিক যুদ্ধ বিসৃত হয়ে বিশ্বযুদ্ধের বিপদ বৃদ্ধি করেছে। প্যালেস্টাইন, ইরাক-ইরান, লেবানন, ইউক্রেনসহ পৃথিবীর দেশে দেশে সাম্রাজ্যবাদীরা আগ্রাসন চালিয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বজায় বা প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। বাংলাদেশকেও তারা এই যুদ্ধে সম্পৃক্ত করতে চায়। কমরেড অজয় ভট্টাচার্য আমৃত্যু সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ আমলা দালাল মুৎসুদ্দি পুঁজির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গেছেন তাই সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ আমলা, দালাল পুঁজি বিরোধী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার সংগ্রামকে বেগবান করার মধ্য দিয়েই কমরেড অজয় ভট্টাচার্যের প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধা জানানো হবে।’

উল্লেখ্য, একজন মার্কসবাদী লেলিনবাদী তাত্ত্বিক নেতা হিসেবে কমরেড অজয় ভট্টাচার্য সকল রূপের সংশোধনবাদের স্বরূপ উন্মোচনে কমরেড আব্দুল হকের সাথে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। আমৃত্যু সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ বিরোধী লড়াইয়ের এই অগ্রসেনানী ৭ বারে মোট ২০ বছর কারাবাস করেন। ১৯৯৯ সালের ১৩ অক্টোবর ৮৫ বছর বয়সে মহান এই বিপ্লবী নেতা মৃত্যুবরণ করেন।