নবীগঞ্জের স্বস্থিপুর মতিউর রহমান চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির ৭ জন সদস্য পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মতিউর রহমান চৌধুরী কর্তৃক অত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক/শিক্ষিকা ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যসহ স্টাফদের সাথে বিভিন্ন অজুহাতে অসৌজন্যমূলক আচরণ, স্বেচ্ছাচারিতা ও একনায়কতন্ত্রের অভিযোগে শনিবার (৩ ডিসেম্বর) সকালে তারা প্রধান শিক্ষকের নিকট পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
এসময় সভাপতি মতিউর রহমান চৌধুরী বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন। তবে তার সাথে মুঠোফোনে কথা বলে তাদের এই সিদ্ধান্ত ও পদত্যাগের কথা তাকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান পদত্যাগকারী নেতৃবৃন্দ।
পদত্যাগকারী সদস্যরা হলেন, মো. সুজাত মিয়া, মো. জবর আলী, আব্দুল কাদির, গৌরাঙ্গ সরকার, হেনা বেগম, তাহিয়া সুলতানা ও শিক্ষক প্রতিনিধি জাহিদুল হক।
পদত্যাগ পত্রে তারা উল্লেখ করেন, ‘সভাপতি পদে থেকে সরকারী বিধিবহির্ভূতভাবে বিদ্যালয় পরিচালনা করে যাচ্ছেন সভাপতি। তাই আপনার সিদ্ধান্তের সাথে আমরা সরকারী বিধিবিধান অনুসরণ করে বিদ্যালয় পরিচালনা কার্যক্রমে অংশগ্রহন করতে আগ্রহী থাকলেও আপনার একনায়কতন্ত্র ও স্বেচ্ছাচারিতা, অশালীন কথাবার্তা ও প্রধান শিক্ষকের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করলাম।’
এদিকে ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। এলাকায় সচেতন মহলের মধ্যে চলছে নানা ধরণের মুখরোচক আলোচনা-সমালোচনা।
অত্র বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির পদত্যাগকারী সদস্যবৃন্দ জানান, উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের স্বস্থিপুর গ্রামে অবস্থিত এমপিওভুক্ত মতিউর রহমান চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি কর্তৃক আয়োজিত গত ১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিতব্য সভায় চরম হট্টগোল সৃষ্টি করে সভা ভন্ডুল করে দেন সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা মতিউর রহমান চৌধুরী। তাদের অভিযোগ শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে মতিউর রহমান চৌধুরী স্বেচ্ছাচারিতা, একনায়কতন্ত্র ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করছেন। এ ঘটনায় সভায় উপস্থিত এবং প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক/ শিক্ষিকাসহ অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের মধ্যে নানা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভের সৃস্টি হয়।
ম্যানেজিং কমিটির সদস্যবৃন্দ বলেন, অত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ অনুমোদন নিয়ে উল্লেখিত সময়ে বিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ম্যানেজিং কমিটির সভা চলাকালীন সময়ে সভাপতি মতিউর রহমান চৌধুরী, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সহ শিক্ষকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও নানা ধরনের হুমকি ধামকি দিয়ে একনায়কতন্ত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ফন্দি আটেন। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সুনাম নষ্ট হবে, এমনকি ক্রমান্বয়ে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাওয়ার আশংকা রয়েছে মর্মে সভাপতির এসব আচরণের প্রতিবাদ করলে তিনি ক্ষেপে গিয়ে সবাইকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে অশালীন আচরণ করেন। এমনকি শিক্ষক কর্মচারীদের নভেম্বর মাসের সরকারী বিলে স্বাক্ষর প্রধান করেন নি তিনি।
এ নিয়ে আব্দুল কাদির, জবর আলী, গৌরাঙ্গ সরকার, সুজাত মিয়া, হেনা বেগম, আবিদা বেগম ও জাহিদুল হকসহ আরো অনেক অভিভাবক বলেন, প্রতিষ্ঠানে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ অনুমোদনের জন্য সর্বসম্মতি হলেও সভাপতি মতিউর রহমান তাঁর এক নিকটাত্মীয়ের জন্য সুপারিশ করে কম্পিউটার অপারেটর পদে মনোনীত না হওয়ায় উক্ত কর্মচারী নিয়োগ অনুমোদনের বিরোধিতা করে উপস্থিত সবার সাথে অশোভন আচরণ ও চরম হট্টগোল করে সভা ভন্ডুল করে দেন।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মোছা. আছমা খাতুন বলেন, মিটিংয়ে উপস্থিত সবাই একমত পোষণ করলেও সভাপতি এর বিরোধিতা করে হট্টগোল সৃষ্টি করেন এবং নানা হুমকি ধামকি দিয়ে মিটিং ভন্ডুল করে দেন।
তিনি আরো বলেন, অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তাদের অফিস সহায়ক বিশখা সরকার একজন অফিস সহায়ক হিসেবে বৈধভাবে কর্মরত, সরকার যেখানে বেতন ভাতা দিচ্ছে সেখানে বিগত ৪ বছর ধরে সভাপতি মতিউর রহমান চৌধুরী তার বেতনভাতা আটকিয়ে রেখেছেন। তিনি স্বাক্ষর না করায় বিশখা সরকার বেতন ভাতা উত্তোলন করতে পারছেন না।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মতিউর রহমান চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তার উপরে আনীত সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।