রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, চট্টগ্রাম ও টেকনাফ থেকে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। তারা হলেন- আব্দুর রব, সাকিব, শামীম হোসেন, নাদিম শেখ, আবছার ও সাইদ উদ্দিন।
ডিএমপি কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতরা অনলাইন থেকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশে সশস্ত্র জিহাদ করার পরিকল্পনা নিয়েই সংঘটিত হচ্ছিল।
সোমবার (২ জানুয়ারি) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে ৬ জনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসির অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তার আব্দুর রব সমন্বয়ক হয়ে সবাইকে অনলাইনে একত্রিত করে শরীয়াহ ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন, জিহাদ, প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতো। পরবর্তীতে তাদের অনলাইনে বিদেশে অবস্থানরত এক বাংলাদেশি সহযোগীর সঙ্গে পরিচয় হয় এবং অডিও-ভিডিও কলে যোগাযোগ স্থাপন করে। বিদেশে অবস্থানরত ঐ ব্যক্তি সবাইকে হিজরত করে জিহাদের জন্য উদ্বুদ্ধ করে।
পরবর্তীতে সেই সদস্য লিবিয়ায় অবস্থানরত আরো একজন বাংলাদেশি ও টেকনাফের স্থানীয় একজনের সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দেয়। সম্মিলিত আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয় আব্দুর রব, শামীম, সাকিব, নাদিম, সাইদসহ অন্য যারা হিজরতে রাজি তারা প্রথমে টেকনাফ গিয়ে তাদের স্থানীয় সহযোগীদের মাধ্যমে ট্রেনিং গ্রহণ করবে। পরবর্তীতে তারা বাংলাদেশে ইসলামী শাসন কায়েমের জন্য জিহাদ করবে।
তিনি বলেন, গতবছরে নভেম্বর প্রথম সপ্তাহে সবাইকে নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় টেকনাফে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেটা অনুসারে গত ১৬ নভেম্বর সাকিব ও নাদিম টেকনাফ যায় এবং স্থানীয় সহযোগী ও গ্রেপ্তার আবছার তাদেরকে টেকনাফে ভাড়া বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দেন।
গ্রেপ্তার আব্দুর রব ছুটি না পাওয়ায় যথাসময়ে দেশে আসতে ব্যর্থ হলে তারা টেকনাফের বাসায় অবস্থান করে তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। গত ২২ নভেম্বর গ্রেপ্তার আব্দুর রব দেশে আসলে তার সহযোগী শামীম ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করে পূর্ব পরিকল্পনানুযায়ী তাদের অন্য সহযোগী ভাড়া করা বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থান করে বিভিন্ন শলা-পরামর্শ করে। দুইদিন পর তারা দুইজন গ্রেফতার সাকিবদের সঙ্গে মিলিত হয়ে তাদের অন্যান্য সহযোগীদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।
সিটিটিসির দাবি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানায়, তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইন ভিত্তিক অ্যাপ্সে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে দল গঠন করে। পরে স্থানীয় সহযোগীদের নিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহন করে দেশে জঙ্গিবাদের জন্য টেকনাফে হিজরত করে অবস্থান করছিল।
তারা সংঘটিত হচ্ছিল, সশস্ত্র জিহাদের প্রস্তুতি নিচ্ছিল এটা কি কোন সাংগঠনিক ব্যক্তি ছাড়া সম্ভব গণমাধ্যমের এমন প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, এখনো তারা সাংগঠনিক কাঠামো দাঁড় করাতে পারে নাই। এটা ছিল তাদের প্রথম প্রচেষ্টা। তারা নিজেদের মধ্যে সশস্ত্র জিহাদের আলোচনা করে, এভাবে হিজরত করছিল। এদের প্রথমই তেমন সদস্য সংখ্যা থাকে না, এরা আস্তে আস্তে সদস্য সংখ্যা বাড়ায়। তারা টেকনাফ পাহাড়ি এলাকায় অবস্থান নেওয়ার পরিকল্পনা করে।
আলকায়েদার সঙ্গে গ্রেপ্তার জঙ্গিদের কোন যোগাযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, আল কায়েদার সঙ্গে তাদের কোন যোগাযোগ নেই। গ্রেপ্তার জঙ্গিরা আলকায়েদার মতাদর্শ অনুসরণ করে। অনলাইনে বিভিন্ন ভিডিও কনটেন্ট দেখে তারা মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।
কে এই আব্দুর রব?
জঙ্গিবাদ সংশ্লিষ্টতায় গ্রেপ্তার আব্দুর রব একজন কোরআনে হাফেজ এবং কওমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন। ২০১৯ সালে জুনে সৌদি-আরব যান। সেখানে রব একটি মসজিদের ইমাম ওদের পাশাপাশি হেফজ শিক্ষা দিতেন। সৌদিতে অবস্থানকালে সে অনলাইনে বিভিন্ন জিহাদি পোস্ট ও ভিডিও দেখে জিহাদের জন্য অনুপ্রাণিত হয়। অনলাইনে রোহিঙ্গা নির্যাতনের একটি ভিডিও কমেন্টের সূত্রধরে সাঈদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। একইভাবে শামীম, সাকিব, নাদিমসহ ও আরও কয়েকজনের সঙ্গে পরিচয় হয়।
গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করা হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, তাদের রিমান্ডে এনে এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করা হবে।