গরুচোর সন্দেহে আটকের পর এক যুবক ও কিশোরকে দিনভর করা হয় মারধর। তারপর এসিড পানির সাথে চুন ও বালু মিশিয়ে জোর করে খাইয়ে দেয়া হয় যুবককে। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পরদিন সকালেই মৃত্যু হয় যুবকের। আহত কিশোর হাসপাতালে চিকিৎাসাধীন।
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রাধানগর গ্রামে মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটেছে। নিহত হেলাল মিয়া (৩৫) উপজেলার ডৌবাড়ি ইউনিয়নের ঘোষগ্রামের মৃত শফিকুর রহমানের ছেলে। গুরুতর আহত কিশোর একই উপজেলার চারগ্রাম চাতল হাওরের বাসিন্দা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া চার মিনিট সাত সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায় এ নির্যাতনের একটি খণ্ডচিত্র। তাতে দেখা যায় একজন যুবক ও একজন কিশোরের দু’হাত পিছন দিকে বেঁধে তাদের ঘিরে আছেন একদল মানুষ।
যুবককে মাটিতে ফেলে তার পিঠের উপর বসে এক ব্যক্তি তার দুই পা উপরে তুলে ধরলে আরেকজন এসে পায়ের পাতায় বেধঢ়ক পেটাচ্ছেন। মারধরের সময় যুবক প্রচণ্ড চিৎকার করছিলেন। পরে সেই ব্যক্তি যুবকের ঘাড়ের উপর চেপে বসেন এবং ওপর ব্যক্তি পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন অংশে বাঁশ দিয়ে বেধঢ়ক পেটাতে থাকেন।
ভিডিওতে আরও দেখা যায়, পাশে পড়ে থাকা কিশোর হাঁটতে পারছিলেন না, তবুও তাকে বাধ্য করা হয় লাঠি দিয়ে যুবককে পেটানোর জন্য। এ সময় ভিডিওতে একটি লাল গরুও দেখা যায় এবং মানুষজন গরু চুরির বিষয় নিয়ে আলাপ করছিলেন।
এ ঘটনায় উপজেলার ডৌবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য হাফিজ উল্লাহ বলেন, ‘গতকাল সকালে দুইজন চোর আটকের ঘটনা শুনেছি। পরে রাতে তাদের স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে জেনেছিলাম। শুনেছি তাদের খুব মারধর করা হয়েছে, চুন-বালু মিশিয়ে খাওয়ানো হয়েছে। মারধরের সময় পুলিশ তাদের আনতে ঘটনাস্থলে গেলেও স্থানীয়রা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেননি।’
স্থানীয়রা জানান, চোর সন্দেহে দুইজন আটক করা হয়েছে, এমন তথ্য জেনে গোয়াইনঘাট থানার সহকারি পরিদর্শক প্রভাকর বড়ুয়া ঘটনাস্থলে যান। তবে আটকদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে, স্থানীয়দের এমন দাবির মুখে তিনি ফিরে আসেন। স্থানীয় ও নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, পুলিশ তাকে উদ্ধার করলে এমন মৃত্যু ঘটতো না।
গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘মঙ্গলবার দিনের কোন এক সময় তাদেরকে স্থানীয় গরু চুরির অভিযোগে আটক করেন। ব্যাপক মারধরের পর একজনের মায়ের জিম্মায় দুইজনকে ছেড়ে দেয়া হয়। তাদের নিয়ে যাওয়ার সময়ই আবার আটকে একটি আধা লিটারের পানির বোতলে চুন ও বালু মিশিয়ে একজনকে জোর করে খাওয়ানো হয়।’
তিনি বলেন, ‘নিহত হেলালের স্বজনেরা জানিয়েছেন বুধবার সকাল হতেই হেলাল খুব অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। বমি করতে থাকেন। তখন তাকে নিয়ে দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় পথেই তার মৃত্যু হয়। একই সময়ে অন্য আহতকে নিয়ে তার স্বজনেরা হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন।’
মারধরের সময় খবর পেয়ে পুলিশের উদ্ধার করতে না পারা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘খবর পাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা জানান যে বিষয়টি সমাধান হয়ে গেছে এবং স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাই আর ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়নি।’
ওসি বলেন, ‘ইতোমধ্যে ভিডিও দেখে আমরা দোষীদের সনাক্ত করা ও তাদের খুঁজে বের করে আটক করার জন্য অভিযান শুরু করেছি। আশা করছি দ্রুত জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে।’