দাম কমানো সয়াবিন তেল বাজারে নেই

লিটার প্রতি ১৪ টাকা কমানো বোতলজাত সয়াবিন তেল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। যা আছে তা সবই আগের বেশি দামের। সরকারের পক্ষ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর দাম কমানো সয়াবিনের বিক্রির সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে বাজারে অভিযান পরিচালনা করলেও তাতে তেমন কোনও সুফলই পাওয়া যায়নি। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের বক্তব্য আগের মতো গতানুগতিক- ‘বেশি দামে কেনা। দাম কমানো সয়াবিন তেলের সরবরাহ বাজারে এখনও আসেনি’।

রাশিয়া আর ইউক্রেনের মধ্যকার যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার দোহাই দিয়ে দেশেও সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছিল। যা ২০৫ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের দাম কমলেও দেশি আমদানিকারকরা দাম কমানোর ক্ষেত্রে নানা অজুহাতে গড়িমসি করছিলেন। অতপর প্রথম দফায় প্রতিলিটারে ৬ টাকা কমিয়ে ১৯৯ টাকা এবং গত ১৭ জুলাই দ্বিতীয়বারের মতো ভোজ্যতেল আমদানিকারকদের সংগঠন প্রতিলিটারে ১৪ টাকা কমিয়ে প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম ১৯৯ টাকা থেকে কমিয়ে ১৮৫ টাকা নির্ধারণ করে। যা পরের দিন ১৮ জুলাই সোমবার থেকে কার্যকর করারও সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সিদ্ধান্তের চার দিন পরেও (বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই) এর প্রভাব বাজারে পড়েনি। এখনও আগের বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল।

উল্লেখ্য, গত ১৭ জুলাই প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৪ টাকা কমিয়ে ১৮৫ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। রবিবার (১৭ জুলাই) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ এ তথ্য জানিয়েছিলেন।

তিনি জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমার প্রেক্ষিতে দেশীয় বাজারে দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরই আলোকে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে দাম পুন:নির্ধারণ করা হয়েছে। যা ১৮ জুলাই সোমবার থেকেই কার্যকর করার কথা।

তিনি আরও জানান, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৬৬ টাকা, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৮৫ টাকা এবং ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৯১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সয়াবিন তেলের পাশাপাশি পাম তেলের দামও ৬ টাকা কমানো হয়েছে। বর্তমানে পাম তেলের নির্ধারিত দাম ১৫৪ টাকা। সেটির নতুন দাম ১৪৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দরপতন যদি অব্যাহত থাকে তাহলে আগামীতেও এর সুফল ভোক্তারা পাবেন বলেও জানান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।

রাজধানীর মৌলভীবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী ও মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মওলা জানিয়েছেন, আমরা তো মণপ্রতি শত শত টাকা লোকসান দিয়েছি, এর কী হবে?’

অপরদিকে কাওরানবাজারের খুচরা ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘আমরা যে দামে কিনি, সে অনুযায়ী বিক্রি করি। প্রতিলিটারে লাভ হয় দুই থেকে চার টাকা। এর বেশি নয়।’

ক্যাবের তথ্যমতে, গত রমজানের ঈদের পর ৫ মে দেশে ভোজ্যতেলের দাম সরকার পুনঃনির্ধারণ করেছিল। ওই সময়ে সয়াবিনের দাম লিটার প্রতি ৩৮ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। এরপর গত ৯ জুন মিল পর্যায়ে ভোজ্যতেলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে এক লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম মিলগেটে ১৮০ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ১৮২ টাকা ও সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম মিলগেটে ১৯৫ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ১৯৯ ও সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ২০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এক লিটারের খোলা পাম অয়েলের (সুপার) দাম মিলগেটে ১৫৩ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ১৫৫ ও সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৫৮ টাকা করা হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে তিন মাসের ব্যবধানে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম কমেছে ২০০ থেকে ৪৯০ ডলার। অথচ ব্যবসায়ীরা এক মাসে দু’দফায় প্রতি লিটার সয়াবিনের দাম বাড়িয়েছেন ৫১ টাকা।

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৯ সালে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের গড় মূল্য ছিল টনপ্রতি ৭৬৫ ডলার। ২০২০ সালে দাম ছিল ৮৩৮ ডলার এবং ২০২১ সালে সয়াবিনের টনপ্রতি দাম ছিল ১৩৮৫ ডলার। কিন্তু, চলতি বছরের মার্চে একপর্যায়ে তা বেড়ে যায়। মার্চে বিশ্ববাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম হয় ১৯৫৬ ডলার।

বিশ্বব্যাংকের ইনডেক্স মুন্ডির তথ্য মতে গতকাল ১৮ জুলাই পাম অয়েলের দাম কমে প্রতিটন বিক্রি হয়েছে ৮৬৬ ডলার ৭৫ সেন্ট, যা গত মে মাসে ছিল ১৭১৬ ডলার। সে হিসেবে পাম তেলের দাম কমেছে সাড়ে ৪৯ শতাংশ। সয়াবিন তেলের দাম একইদিনে কমে হয় ১ হাজার ৩২৪ ডলার ৫৪ সেন্ট। সে হিসেবে সয়াবিন তেলের দাম কমেছে প্রায় সাড়ে ৩২ শতাংশ।