মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গোলাগুলি থেমে নেই। গত শুক্রবার একটি মর্টারশেল সীমান্ত ঘেঁষা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের কোনারপাড়া এলাকায় এসে পড়ে। এটি বিস্ফোরণ ঘটে একজন নিহত ও পাঁচ জন আহত হন। এরপর থেকে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে। বাড়িঘর ছেড়ে আত্মীয়-স্বজনের কাছে আশ্রয় নিচ্ছেন অনেকে। তবে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত মনে হওয়ায় রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে কেউ কেউ বাড়ি ফিরে আসছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার মর্টারশেল ও ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে হতাহতের পর ঘুমধুম ইউনিয়নের কোনারপাড়া ও মাঝেরপাড়া গ্রামের ৬০টি পরিবার মধ্যরাতে বাড়িঘর ছেড়ে চলে যান। এছাড়া হেডম্যান পাড়ার নারীদেরও ‘নিরাপদ স্থানে’ সরিয়ে রাখা হয়। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত মনে হওয়ায় ওই তিন গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা বাড়ি ফিরে এসেছেন।
স্থানীয় গ্রাম পুলিশ আবদুল জাব্বার ও ঘুমধুমের তুমব্রু বাজারের ব্যবসায়ী বদিউল আলম জানান, শুক্রবার রাতে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেল বিস্ফোরণে সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত মো. ইকবাল (১৭) নামে এক রোহিঙ্গা নিহত হন। আহত হন পাঁচ জন। শনিবার সকালে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। এরপর লাশ দাফন করেছেন স্বজনরা।
তারা আরও জানান, মর্টারশেল বিস্ফোরণে হতাহতের পর ঘুমধুমের কোনারপাড়া ও মাঝেরপাড়া গ্রামের ৬০টি পরিবার রাত ১২টার দিকে বাড়িঘর ছেড়ে চলে যান। এছাড়া হেডম্যানপাড়ার নারীদেরও নিরাপদ স্থানে রাখা হয়। তবে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত মনে হওয়ায় নিজ বাড়িতে ফিরে এসেছেন তিন গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা।
ঘুমধুম ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য দিল মোহাম্মদ বলেন, ‘পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক মনে হলেও এলাকায় এখনও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। মাঝে মাঝে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যেই কোনারপাড়া ও মাঝেরপাড়া থেকে চলে যাওয়া কেউ কেউ আজ সকালে বাড়ি ফিরে এসেছেন।’
ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ‘মিয়ানমারের বাহিনী কী চায় তা বুঝতে পারছি না। তবে সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছে বিজিবি। তাদের টহলও আগের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে।’
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সালমা ফেরদৌস বলেন, ‘বর্তমানে সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক। বিজিবির সদস্যরা কড়া নিরাপত্তায় রয়েছেন।’
এদিকে নাইক্ষ্যংছড়ির একাধিক সাংবাদিক অভিযোগ করেছেন, তাদেরকে ঘুমধুম ও তুমব্রুতে দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়া হচ্ছে। কোনও সাংবাদিককে তথ্য সংগ্রহ করতে সেখানে যেতে দিচ্ছেন না বিজিবির সদস্যরা। এ বিষয়ে বিজিবি সদস্যরা সাংবাদিকদের বলছেন, তারা ওপরের নির্দেশেই এসব করছেন।
জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, ‘সীমান্তের নিরাপত্তায় বিজিবি সদস্যরা কাজ করছে। এছাড়া জেলা প্রশাসন এ ব্যাপারে তৎপর আছে। স্থানীয়রা যাতে আতঙ্কিত না হয় সে ব্যাপারে কাজ করছে জেলা প্রশাসন।’
তিনি আরও বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতিতে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের শনিবার কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার একটি কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে পর্যাপ্ত গাড়ির ব্যবস্থাও করা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, গত ২৮ আগস্ট বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম এলাকার জনবসতিতে দুটি মর্টারশেল এসে পড়ে। এতে কেউ হতাহত না হলেও সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই থেমে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। এর মধ্যে দুটি যুদ্ধ বিমান ও দুটি ফাইটিং হেলিকপ্টার থেকে গোলা নিক্ষেপ করে দেশটি।
এসব ঘটনায় ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তিন বার তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আবার এ ধরনের ঘটনা ঘটলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ফোরামে যাবে বলে তখনও হুঁশিয়ারি দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। কিন্তু গত শুক্রবার মর্টারশেল ও ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে হতাহতের পর উদ্বেগ বেড়ে যায়। এ ঘটনায় আজ এক মাসে চতুর্থবারের মতো মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।