এখনও রয়ে গেছে সাম্প্রতিক বন্যার দুর্ভোগ। এর মাঝেই সারাদেশের মতো সিলেটেও উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ত্যাগের মহিমায় উদযাপিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল আজহা। মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহ লাভের আশায় ঈদের জামাত শেষে সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করেছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।
সিলেট নগরীর ঐতিহ্যবাহী শাহী ঈদগাহ ময়দানে হাজারও মানুষের অংশগ্রহণে পবিত্র ঈদুল আজহার প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। রোববার (১০ জুলাই) সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত এ জামাতে ইমামনি করেন বন্দরবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা মো. আবু হোরায়রা। জামাত শেষে দেশ ও বন্যাকবলিত মানুষদের জন্য দোয়া করা হয়।
শাহী ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত জামাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মুসল্লিরা অংশ গ্রহণ করেন।
এদিকে সিলেটের ঈদের দ্বিতীয় বৃহৎ জামাত সকাল ৮টায় হযরত শাহজালাল (রহ.) জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। একই সময় হযরত শাহপরাণ (র.) মাজার জামে মসজিদে সাড়ে ৮টায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এছাড়া সরকারি আলীয়া মাদরাসা মাঠে, নগরীর পুলিশ লাইন্স মাঠ, টিলাগড় শাহ মদনী ঈদগাহ ময়দান, মাছিমপুর শেখ মৌলভী ওয়াকফ এস্টেট জামে মসজিদ, মেন্দিবাগ জামে মসজিদেও ঈদ উল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
বন্দরবাজারস্থ হাজী কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদে তিনটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এরমধ্যে প্রথম ঈদের জামাত সকাল ৭টার, দ্বিতীয় জামাত ৮টায় এবং শেষ জামাত ৯টায় আয়োজন করা হয়। কাজিরবাজার জামেয়া মাদানিয়া মাদরাসা মাঠে সকাল ৭টায় এবং পশ্চিম পীরমহল্লা এলাকার গৌসুল উলূম জামেয়া ইসলামিয়া মাদরাসায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
নামাজ শেষে ঈদগাহে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা অত্যন্ত আনন্দ ও উৎফুল্লের সঙ্গে একে অন্যের সঙ্গে কোলাকুলি ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) বিএম আশরাফ উল্লাহ তাহের জানান তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল ঈদগাহ ময়দানে।
এদিকে ঈদ উপলক্ষে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার, ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, এতিমখানা এবং জেলা প্রশাসনের সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। খাবার বিতরণ করা হয়েছে বন্যাকবলিত এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে শনিবার (৯ জুলাই) থেকে তিনদিনের সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তারা।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেছেন, মহান আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা। ‘আজহা’ অর্থ কুরবানি বা উৎসর্গ করা। ঈদুল আজহা উৎসবের সাথে মিশে আছে চরম ত্যাগ ও প্রভুপ্রেমের পরাকাষ্ঠা। মহান আল্লাহর নির্দেশে স্বীয় পুত্র হযরত ইসমাইলকে (আ.) কোরবানি করতে উদ্যত হয়ে হযরত ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর প্রতি অগাধ ভালোবাসা, অবিচল আনুগত্য ও অসীম আত্মত্যাগের যে সুমহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা ইতিহাসে অতুলনীয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, হযরত ইব্রাহিম (আ.) মহান আল্লাহর উদ্দেশে প্রিয়পুত্রকে উৎসর্গের মাধ্যমে তার সন্তুষ্টি লাভে যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন, তা বিশ্ববাসীর কাছে চিরকাল অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে থাকবে।
গতবারের মতো এবারও করোনার বিস্তার রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ উদযাপন করেছেন মুসলমানরা। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস রোধে ধর্ম মন্ত্রণালয় এবারও আট দফা নির্দেশিনা জারি করেছে।