পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সুবিধায় ঢাকাসহ মোট আটটি বিভাগীয় শহরে ঢাবির ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যার মধ্যে একটি উপকেন্দ্র হচ্ছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় । সিলেটে আসন পড়েছে ২৮৯৬ জন পরীক্ষার্থীর।
শুক্রবার (১০ জুন) সকাল থেকে বৃষ্টি হওয়ায় সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উপকেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদেরকে বিপাকে পড়তে দেখা গেছে।
এছাড়া বৃষ্টি হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশে নানা জটিলতায় পড়তে হয়েছে। সকাল ১০টার আগে পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত থাকার নির্দেশ থাকলেও বৃষ্টি হওয়ার কারণে অনেক পরীক্ষার্থী দেরিতে কেন্দ্রে উপস্থিত হয়েছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে নমনীয় রয়েছেন। দেরিতে উপস্থিত হয়েও পরীক্ষা হলে ঢুকতে পারছেন পরীক্ষার্থীরা।
এদিকে বৃষ্টি হওয়ার কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। সকাল থেকে বৃষ্টি হওয়ার কারণে বৃষ্টিতে আশ্রয় নেয়ার মতো ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে বৃষ্টিতে ভেজে অপেক্ষা করছেন অভিভাবকরা।
মৌলভীবাজার থেকে পরীক্ষা দিতে আসা পরীক্ষার্থী নাজমুল হাসান নোমান বলেন, ‘সকালে ট্রেনে করে পরীক্ষার উদ্দেশ্যে বের হই। তখন বৃষ্টি ছিলো না। তাই ছাতা নিয়ে বের হই নাই। তবে সিলেটে এসে বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। ছাতা না থাকায় বৃষ্টিতে ভেজে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতে হয়েছে আমাকে।’
এদিকে সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা হতে আসা আরেক শিক্ষার্থী নিগার সুলতানা বলেন, ‘বৃষ্টি হলেও পরীক্ষা তো দিতে হবে। তাই বৃষ্টিতে ভিজেই পরীক্ষা দিতে আসছি।’
নিগার সুলতানার অভিভাবক যোবায়েদা হান্নান বলেন, ‘মেয়ে পরীক্ষা দিতে হলে ঢুকছে। তাই বাইরে অপেক্ষা করছি। আজকে পরীক্ষার্থীও অনেক। অভিভাবকও এসেছেন অনেক। বৃষ্টি হচ্ছে। বাইরে মাথা গোঁজার মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই। তাই ছাতা মাথায় নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে আছি।’
এদিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলা হতে আগত পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের তথ্য সহায়তা দিচ্ছেন শাখা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ। পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য সুপেয় খাবার পানির ব্যবস্থা করেছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মো. খলিলুর রহমান বলেন, সকাল থেকে বৃষ্টিতে ভিজে পরীক্ষার্থীদের সহযোগিতা করে যাচ্ছি আমরা। পরীক্ষার্থীদেরকে মাস্ক ও কলম বিতরণ করছেন আমাদের সেচ্ছাসেবীরা। এছাড়া যারা মোবাইল ও ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস নিয়ে এসেছেন তাদের জিনিসপত্রগুলো আমাদের সেচ্ছাসেবীরা টেন্টে রাখছেন এবং পরীক্ষা শেষে তাদেরকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন।
শাবি কেন্দ্রের ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. রাশেদ তালুকদার বলেন, বৃষ্টিতে ভর্তিচ্ছু ও অভিভাবকদের একটু অসুবিধা হলেও সকাল থেকে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আশা করি কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই পরীক্ষা সম্পন্ন হবে। তাই সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।
সিলেট ছাড়াও ঢাকার বাইরের অন্য কেন্দ্রগুলো হলো— চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (ময়মনসিংহ), বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (রংপুর)।
এবার ‘ক’ ইউনিটে এক হাজার ৮৫১টি আসনের বিপরীতে মোট আবেদনকারীর সংখ্যা এক লাখ ১৫ হাজার ৭১০ জন। সে হিসাবে প্রতি আসনের বিপরীতে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন প্রায় ৬৩ জন শিক্ষার্থী।
এরমধ্যে, বরিশালে ২৭৬৩ জন, চট্টগ্রাম ১০৪২৬ জন, ঢাকায় ৬৩৬৬২ জন, খুলনায় ৭৫৩৭, ময়মনসিংহে ৬৬৩৪, রাজশাহীতে ১৩৩১৮, রংপুরে ৮৪৭৬ জনের আসন পড়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের অধীনে রয়েছে ১০টি অনুষদ। এগুলো হলো— বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, ফার্মেসি, আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদ, পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট, পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, তথ্য প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট, ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ইত্যাদি।
‘ক’ ইউনিটের পরীক্ষায় এমসিকিউ এবং লিখিত বা বর্ণনামূলক প্রশ্ন থাকবে। ভর্তি পরীক্ষার মোট নম্বর ১০০। এর মধ্যে এমসিকিউ-এর জন্য ৬০ নম্বর এবং লিখিত বা বর্ণনামূলকের জন্য ৪০ নম্বর থাকবে। এমসিকিউ-এর জন্য ৪৫ মিনিট এবং লিখিত বা বর্ণনামূলকের জন্য ৪৫ মিনিট থাকবে। এমসিকিউ অংশে প্রতি বিষয়ে মোট নম্বর থাকবে ১৫ করে, আর লিখিত অংশে প্রতি বিষয়ে মোট নম্বর থাকবে ১০ করে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি প্রশ্নের মান ২ থেকে ৫-এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।