সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার ২ নং পাটলী ও ৯ নং পাইলগাওঁ ইউনিয়ন পরিষদের ২ ওয়ার্ডের দু’জন সদস্য দীর্ঘদিন ধরে লাপাত্তা। তারা হলেন পাটলী ইউনিয়নে ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল মালেক ও পাইলগাওঁ ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মধু মিয়া। জানা যায়, তিন বছর ধরে তারা পলাতক রয়েছেন। টানা ১৬ মাস ধরে ইউনিয়ন পরিষদের মাসিক সভায় অনুপস্থিত থাকার ফলে জন্মসনদ, মৃত্যুসনদ, উত্তরাধিকারী সনদসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন এসব ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। এ ছাড়া এলাকার বিভিন্ন উন্নয়ন কাজও ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত তাদের (পলাতক ইউপি সদস্য মধু মিয়া ও আব্দুল মালেক ) অপসারণপূর্বক শূন্য ঘোষণা করে উপনির্বাচনের মাধ্যমে ওই ওয়ার্ডে নতুন মেম্বার নির্বাচনের ব্যবস্থা নিতে ভুক্তভোগীরা দাবি জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, টানা ১৩ মাসের অধিক সময় ইউনিয়ন পরিষদের মাসিক সভায় কোনো ইউপি সদস্য অনুপস্থিত থাকলে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ধারা ৩৪ এর ৪(ক) এর পরিপন্থি হওয়ায় তাকে স্বীয় পদ থেকে অপসারণের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে প্রায় ১৬ মাস ধরে পরিষদের মাসিক সভায় অনুপস্থিতি স্বত্ত্বেও ইউপি সদস্য (পলাতক) মধু মিয়া ও আব্দুল মালেক অপসারণ করা হয়নি।
পাটলী ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা শাহ টুনু মিয়া জানান, ‘আমাদের ওয়াডের মেম্বার না থাকায় ওয়ার্ডবাসী ভোগান্তি পোহাছেন। আব্দুল মালেক কানাডা চলে গেছেন।’
পাটলী জংগল গ্রামের জমির উদ্দিনবলেন, ‘মালেক মেম্বার কানাডা চলে গেছেন, উনি না থাকায় বিভিন্ন কাছে বাধা পড়ছে।’
মিনাজপুর গ্রামের শিফুল মিয়া জানান, ‘মেম্বার না থাকায় আমরা নানান সমস্যায় পড়ছি, প্রশাসনের কাছে দাবী নতুন করে নির্বাচন দেওয়ার জন্য।’
পাইলগাওঁগ্রামের , সেনুর মিয়া বলেন, ‘নির্বাচনের দুই মাসের মাথায় মধু মিয়া নির্বাচিত হয়ে লন্ডন চলে যান। আমাদের ৩ নং ওয়ার্ডের মেম্বার না থাকায় আমরা উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত।’
পাইলগাওঁ গ্রামের মোঃ শিফন মিয়া বলেন, ‘আমাদের ৩ নং ওয়ার্ডের মেম্বার দীর্ঘদিন ধরে লাপাত্তা, আমরা বিভিন্ন কাজে মেম্বারের স্বাক্ষরের জন্য সমস্যায় পড়তে হয়। শীঘ্রই এই ওয়ার্ড শুন্য ঘোষনা করে নির্বাচন দেওয়ার দাবী জানাচ্ছি।’
পাইলগাওঁ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুখলেছ মিয়া ও পাটলী ইউপি চেয়ারম্যান আংগুর মিয়া জানান, ‘৫ নং ওয়ার্ড ইউনিয়নের সর্ববৃহৎ ওয়ার্ড। সরকার ঘোষিত সকল কর্মসূচি এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় উপকারভোগীদের তালিকা যাচাই-বাছাই, নাগরিক সেবা নিশ্চতকরণে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত সদস্যদের নির্ধারিত দায়িত্ব আছে। উনার অনুপস্থিতির কারণে নাগরিক সনদ প্রদানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সঠিক কিনা, উত্তরাধিকার সনদে বর্ণিত সকল উত্তরাধিকারের তালিকা সঠিক কিনা তা শনাক্তকরণে সমস্যা হচ্ছে। তাছাড়া গ্রাম আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা এবং এলাকার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড উনি না থাকার কারণে দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে ওয়ার্ডের জনগণ ভোগান্তির শিকার ও নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, ‘পাইলগাওঁ ও পাটলী ইউনিয়ন পরিষদে দুইজন মেম্বার অনুপস্থিত শুনেছি। আমাদের কাছে কোন লিখিত কাগজ আসে নাই।’
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল বশিরুল ইসলাম জানান, ‘দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়ন পরিষদের সরকারি দায়িত্বে অনুপস্থিত ইউপি সদস্যরা শুনেছি বিদেশ আছেন। স্বীয় পদ হতে অপসারণের ও শুন্য ঘোষনা করে নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট নির্বাচন দেওয়ার জন্য কাগজ পত্র পাঠানো হবে।’