প্রাচীনকাল থেকেই নদ-নদীর কিনারায় মানুষের আবাস্থল গড়ে উঠেছে। সেই যুগে সড়কপথ গড়ে না ওঠায় মানুষ নৌপথে চলাচল করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করত। কালের আবর্তে সড়কপথ তৈরি হওয়ায় নদীপথ হারিয়ে ফেলেছে তার জৌলুস।
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে কুশিয়ারা নদীর পাড় ঘেঁষে সেই আদিকাল থেকেই স্থানীয় জমিদার থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষ বসতি স্থাপন করে আসছেন। একসময় শেরপুর থেকে ভৈরব পর্যন্ত যাতায়াতের একমাত্র পথ ছিল এই কুশিয়ারা নদী। এখন সেই নদী বেঁচে আছে মৃতপ্রায় হয়ে। স্রোত নেই আগের মতো।
সরকারি তদারকিতে এই নদী খনন না হওয়ায় প্রতি বর্ষা মৌসুমে নদী ফুলে ওঠে তীরের মানুষকে দুর্ভোগে ফেলে। এই দুর্ভোগের শিকার হন জগন্নাথপুর উপজেলার আশারকান্দি, পাইলগাঁও, রানীগঞ্জ ও চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ।
গত কয়েকবছর ধরে সুনামগঞ্জের হাওর রক্ষার জন্য স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। বাঁধ নির্মাণের পর হাওরে নদীর পানি প্রবেশ করতে না পারায় প্রতিনিয়ত ফুলে ওঠে পাড়ের বসতিতে আঘাত হানে কুশিয়ারা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলার অন্তত লক্ষাধিক মানুষ।
বর্ষা মৌসুমে প্রতি বছর অবহেলিত এই নদীপাড়ের মানুষের আধাপাকা ও পাকা দালানকোঠা, ফিসারি, গবাদি পশু, সবজি বাগানসহ অনেকের শিশুসন্তানও চিরদিনের জন্য হারিয়ে যায়। প্রতি বছর ক্ষয়ক্ষতি হয় প্রচুর। এমন পরিস্থিতিতে নদী দ্রুত খনন করে খননকৃত মাটি দিয়ে বন্যাক্রান্ত এসব নিম্নাঞ্চল ভরাট করলে স্থায়ী একটি সমাধান আসবে বলে মনে করছেন নদীপাড়ের মানুষসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ।
প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলের সাথে পলি মাটি এসে কুশিয়ারা নদীর তলদেশ দিনে দিনে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে নদীর নাব্যতা হারিয়ে অসংখ্য ডুবোচর সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে হেমন্ত মৌসুমে নদীর পানি কমে গেলে নদীর ডুবোচরে নৌযান ও ফেরী আটকে যায়। এতে অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হয়। যে কারণে ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদীর ডুবোচর চিহিৃত করে অপসারণ করা অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহ এস এম ফরিদ, এখলাছুর রহমান ও মাসুম আহমদসহ আরও অনেকে জানান, নদীর পাশের খাল-বিল বন্ধ থাকায় স্রোত কমে গিয়ে পানি ফুলে বসতবাড়িতে উঠে পড়ে। নদী খনন করে নিম্নাঞ্চলের মানুষের বসতভিটায় মাটি পৌঁছে দেয়া হলে বন্যার্ত মানুষ উপকৃত হবে। এর ফলে পাউবো’র বাঁধ নদীভাঙনের কবল থেকে মুক্তি পাবে।
সুনামগঞ্জ জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার জানান, নদী খননের বিষয়ে আমাদের একটি স্টোরি চলছে। কুশিয়ারা নদীর খনন আমাদের স্টোরিতে আসে কি না এখন আমি বলতে পারছি না। কুশিয়ারার বিষয়ে আমাদের আরেক কর্মকর্তা আছেন। তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ভালো বলতে পারবেন।