সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের শ্রীধরপাশা গ্রামের একুয়ান ইসলামকে (১৯) ইতালি পাঠানোর কথা বলে লিবিয়ায় হত্যার অভিযোগ এনে গত সোমবার ৪ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন তার বাবা তরিকুল ইসলাম। ওই মামলায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রোববার (৯ অক্টোবর) রাতে হবিগঞ্জ সদর বাস স্ট্যান্ড এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, মামলার ৪ আসামির মধ্যে দুইজন প্রবাসে। মামলার প্রধান আসামি আবুল মিয়া ও দ্বিতীয় আসামি আছমা বেগমকে রোববার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসময় তাদের কাছ থেকে নগদ ৪ লক্ষ ১৫ হাজার ৫০০ টাকা, ৭টি মোবাইল ফোন, ১টি এটিএম কার্ড, ২টি ব্যাংক চেক ও ১টি পাসপোর্ট জব্দ করা হয়।
জানা গেছে, জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের শ্রীধরপাশা গ্রামের কৃষক তরিকুল ইসলাম জমি বেচে ছেলে একুয়ান ইসলামকে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু ইতালি যাওয়ার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি একুয়ানের। তিন মাস পর অপূর্ণ স্বপ্ন নিয়ে বাড়িতে ফেরে ছেলের নিথর দেহ। দালালকে ১৯ লাখ টাকা দিয়েছিলেন বাবা তরিকুল। কিন্তু সেই টাকা তো গেল, সেই সাথে গেল ছেলের জীবনও।
একুয়ানের পরিবারের লোকজন জানান, গত বছরের মার্চে একই গ্রামের লিবিয়া প্রবাসী আলী হোসেনের মাধ্যমে ৪ লাখ টাকায় সে দেশে যান একুয়ান। সেখানে পৌঁছার পর দালাল চক্র তাকে আটক করে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। সেখান থেকে ছেলের একটি হাড় জিরজিরে ছবি পাঠিয়ে টাকা দাবি করা হয়। ছেলের প্রাণ রক্ষা করার জন্য মাফিয়াদের টাকা দিতে হবে বলে জানান আলী হোসেন। তার কথামতো ১০ লাখ টাকা পাঠায় একুয়ানের পরিবার। পরে আরও ৫ লাখ টাকা দিয়ে তাকে ইতালি পাঠানোর চুক্তি হয় দালাল আলী হোসেনের সঙ্গে। গত ১৬ জুন সাগরপথে ইতালি যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় একুয়ানের। এ খবর জানার পর ভেঙে পড়েন পরিবারের লোকজন। এরপর থেকেই দালাল আলী হোসেনের বাবা-মা গ্রাম ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছেন।
একুয়ানের চাচা ফজলু মিয়া বলেন, দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে একুয়ান ছিল সবার বড়। অভাবের সংসারে সচ্ছলতা আনতে দালালদের প্ররোচনায় জমি বিক্রি করে লিবিয়া যায় সে। সেখানে তাকে মারধর করা হয়। মাফিয়া চক্রের কাছ থেকে তাকে বাঁচাতে ১০ লাখ টাকা এবং ইতালি পাঠানোর জন্য আরও ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু লাশ হয়ে ফিরল সে। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।