সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ কুশিয়ারা নদীতে জেগে ওঠা চর থেকে অবাণিজ্যিকভাবে বালু ও বালু মিশ্রিত মাটি উত্তোলনের অনুমোদন দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়। এই অনুমোদনকে পুঁজি করে একটি অসাধু ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন স্থানে বালু বিক্রয় করে যাচ্ছে। এতে নদীর উভয় তীরের ফসলি জমিসহ ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে গ্রামবাসী।
জানা যায়, উপজেলার নারিকেল তলা গ্রামের পাশে কৃষি ইনস্টিটিউটের মাটি ভরাটের জন্য কুশিয়ারা নদীর জেগে উঠা চর থেকে বালু উত্তোলনের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় শাখা থেকে একটি স্মারকে পঞ্চান্ন লক্ষ ঘনফুট বালু ও বালু মিশ্রিত মাটি উত্তোলনের অনুমোদন দেয় ঠিকাধারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স একতা এন্টারপ্রাইজের মালিক শফিক মো. জাবেদকে। এই শর্তযুক্ত অনুমোদনকে সামনে রেখে উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানে মাটি দেওয়ার পাশাপাশি গণহারে নদীতে চলছে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। এতে নদীর উভয়তীরের মানুষের ফসলি জমিসহ ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছেন দুই ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের মানুষ।
সরেজমিনের গিয়ে দেখা যায়, কৃষি ইনস্টিটিউটের মাটি ভরাটের একটি মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করলেও আরেকটি মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রয় করা হচ্ছে। পাশাপাশি কিছু লোক দিয়ে জেগে উঠা চর থেকে মোটা বালু মাথায় করে নৌকা ভর্তি করে বিক্রয় করছে। এই পাশে থাকা সুনামগঞ্জবাসীর স্বপ্নের সেতু রানীগঞ্জ সেতুসহ পাশের রানীনগর গ্রাম হুমকি মুখে রয়েছে। এই বালু উত্তোলনের ফলে বহু মানুষ ঘরবাড়ী হারানোর আশঙ্কায় রয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, অনুমোদনের আড়ালে কতিপয় অসাধু বালু ব্যবসায়ীর বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। ইজারাদারের যোগসাজশে স্থানীয় বালু উত্তোলনকারীদের নিয়ে একটি সিন্ডিকেট বানিয়ে দিগলবাগ মৌজা ও পাইলগাঁও মৌজা থেকে প্রায় কয়েক কোটি টাকার বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
বালু উত্তোলনের দায়িত্বে থাকা একজন জানান, ‘আমরা কয়েক দিন ধরে এখান থেকে বালু তুলছি। আজ হুট করে তারা বলে এসিলেন্ট স্যার আসবে তোমরা চলে যাও। তাই আমরা নৌকা বন্ধ করে এখানে লুকিয়ে আছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, ‘রানীগঞ্জ ইউনিয়ন ভূমি অফিসকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে বালু বিক্রি করছে।’
এ বিষয়ে ঠিকাধারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স একতা এন্টারপ্রাইজের মালিক শফিক মো. জাবেদ এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাকে যতটুকু বালু তোলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ততটুকু তুলছি। এর বাইরে তোলা হচ্ছে না। তারপরও খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি। কেউ বালু বিক্রয় করছে কিনা।’
জগন্নাথপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি কর্মকর্তা রিয়াদ বিন ইব্রাহিম ভূঞা সা-আধ বলেন, ‘অনুমোদন চারা কেউ অবৈধভাবে বালু বিক্রি করতে পারবে না। আমরা অভিযান করবো।’
এ বিষয়ে উপজেলা জগন্নাথপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল বশিরুল ইসলাম জানান, অনুমোদনের বাইরে কেউ বালু উত্তোলন করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।