শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) অর্থনীতি বিভাগের কারিকুলাম কমিটিতে শিল্প প্রতিনিধি হিসেবে বিভাগটির প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের সাবেক এক নেতাকে নিয়োগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সমালোচনার তোপে পড়ে নিয়োগের দুই দিন পর গতকাল বুধাবর তা বাতিল করতে বাধ্য হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ নিয়ে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে দেখা দিয়েছে বিরুপ প্রতিক্রীয়া।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. ফজলুর রহমান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে অর্থনীতি বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের জেনারেল ম্যানেজার (পিআর) মো. কামরুল ইসলামকে বিভাগটির এম.এ/ এম. এস.এস, এম.ফিল ও পিএইচ.ডি (শিক্ষাবর্ষ: ২০২২-২০২৩) এর কারিকুলাম কমিটিতে বাংলাদেশ ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক (বিএনকিইএফ) এর নির্দেশনা অনুসারে ১ বছরের জন্য শিল্প প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
নিয়োগের পর পরই বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে সমালোচনার ঝড় তোলেন ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতারা। ‘যোগ্য ব্যক্তি থাকা সত্বেও ছাত্রদল নেতাকে কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কারিকুলামে শিল্প প্রদিনিধি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে’ এমন প্রশ্ন তোলে সমালোচনা করেন তারা।
নিয়োগের সমালোচনা করে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মলয় সরকার সামাজিক যোগাযোগম মাধ্যমে লিখেন, ‘শাবিপ্রবির সাবেক ছাত্রদলের সভাপতি মো. কামরুল ইসলাম ভাইকে পুরস্কৃত করায় শাবিপ্রবি প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।’
ইমরান আহমেদ নামের আরেক সাবেক নেতা লিখেন, ‘তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং অনতিবিলম্বে এই বিতর্কিত মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানাই।’
শাখা ছাত্রলীগের সাবেক পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মো. খলিলুর রহমান লিখেন, ‘ওনার স্ট্যাটাসের কমেন্টবক্সটা একটু দেখে আসেন দাদা, আমাদের ভাই ব্রাদারের অভিনন্দনের ঠেলায় ভেসে যাচ্ছে, ‘দুঃখজনক’।’
ছাত্রলীগের এমন সমালোচনার তোপে পড়ে গতকাল বুধবার এ নিয়োগ বাতিল করতে বাধ্য হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নিয়োগ বাতিলের নোটিশে উল্লেখ করা হয়, গত ৯ মে প্রেরিত আপনার পত্র (সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন) অনুযায়ী অর্থনীতি বিভাগের কারিকুলাম পর্যালোচনায় শিল্প প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরিত ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের জেনারেল ম্যানেজার (পিআর) মো. কামরুল ইসলাম এর মনোনয়ন ভাইস চ্যান্সেলরের নির্দেশে বাতিল করা হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের সাথে আলোচনাক্রমে নতুন একজন শিল্প প্রতিনিধি মনোনয়ন পূর্বক প্রেরণের জন্য অনুরোধ করা হলো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনিয়র শিক্ষক বলেন, ‘অন্তত শিক্ষাক্ষেত্রে দলমত বিভেদে না যাওয়া দরকার। যতটুকু জানি কামরুল অনেক আগে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে কাজে করে আসছে। সে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সে অনেক ভালো অবস্থানে আছে। আমি মনে করি, সে থাকলে অর্থনীতি বিভাগের একাডেমিক কারিকুলামকে আরো সুন্দর করে সাজাতে পরামর্শ দিতে পারত। তবে যা হয়েছে, এটা শোভনীয় হয়নি!’
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া কি জানতে মো. কামরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. ফজলুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলে তিনি রিসিভ করেন নি।
প্রসঙ্গত, মো. কামরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। এছাড়া তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। পাশাপাশি শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (শাকসু)’র সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বলে জানা গেছে।