সুনামগঞ্জের ছাতকে মসজিদ-মাদ্রাসার জমি দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন আইনাকান্দি গ্রামের আশিকুল ইসলাম। এ নিয়ে গ্রামবাসীর সাথে তার এক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পক্ষে-বিপক্ষে মামলাও হয়েছে। মসজিদ-মাদ্রাসার পক্ষে জমির দলিল, দখল ও একটি মামলার আদেশ রয়েছে এরপরও আশিকুল ইসলাম বেপরোয়া। এ নিয়ে গ্রাম এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। যেকোনো সময় সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
উপজেলার সিংচাপইড় ইউনিয়নের আইনাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মৃত খোয়াজ আলীর ছেলে আশিকুল ইসলাম। থাকেন প্রবাসে। তিনি দেশে আসলেই মসজিদ-মাদ্রাসার জমি দখল করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেন গ্রামের লোকজন। গ্রামের আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আশিকুর ইসলামের পক্ষের নুরুজ্জামান বাদী হয়ে গ্রামবাসী ও আলেমদের বিরুদ্ধে থানা ও আদালতে মামলা দায়ের করে হয়রানি করে যাচ্ছেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছেন গ্রামের লোকজন।
জানা যায়, আইনাকান্দি গ্রামের মসজিদ ও মাদ্রাসা সংলগ্ন জমিতে একটি মাছের খামার রয়েছে। মসজিদের উত্তর দিকের ওই দেড় একর জমিতে মসজিদ মাদ্রাসার উন্নয়নের জন্য গ্রামবাসীর উদ্যোগে মাছের খামার করা হয়। এ খামারের পূর্ব দিকে আশিকুল ইসলামের বসত বাড়ি। আর এ বাড়িতে মাটি ভরাট এবং বিভিন্ন কাজে তারা মসজিদের জমি ব্যবহার করে যাচ্ছে।
গত বন্যায় মসজিদ-মাদ্রাসা নামিয় মাছের খামারটির ক্ষতি সাধন হলে গ্রামবাসীর উদ্যোগে মাছের খামারের পাড় উঁচুকরণ, খামারের উত্তর দিকে গাইড ওয়াল নির্মাণ সহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের সিদ্ধান্ত নিয়ে গ্রামের লোকজন কাজ শুরু করলে এতে বাঁধ সাধেন আশিকুল ইসলাম। তিনি দাবি করেন এ জমি তার। কিন্তু তার ভাই নুরুল ইসলাম আবার স্বীকার করেন জমি মসজিদ ও মাদ্রাসার।
এ নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গত ৩০ মার্চ গ্রামে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে থানায় পক্ষে-বিপক্ষে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আশিকুল ইসলামের পক্ষে হেলাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩৯ জন গ্রামবাসী এবং আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। গ্রামবাসীর পক্ষে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সহ সভাপতি হারুনুর রশিদ বাদী হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন।
এদিকে নুরুজ্জামান বাদী হয়ে জমির মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা (নং২৩৮/২৩ এবং ২৭৪/২৩) দায়ের করেন। ওই মামলা দু’টি নথিজাত করে গত ২৮ মার্চ সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একেএম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ মসজিদ মাদ্রাসা তথা গ্রামবাসীর পক্ষে আদেশ দিয়েছেন।
জমির দখল ও মালিকানা মসজিদ-মাদ্রাসার নামে রয়েছে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইসলাম উদ্দিন সরেজমিন তদন্ত করে এসব রিপোর্ট দিয়েছেন। এর পরও কখনো উত্তর দিকে আবার কখনো দক্ষিণ দিকে জমির মালিকানা দাবি করছেন আশিকুল ইসলাম। মসজিদের খামারের উন্নয়ন কাজ বারবার বাধাগ্রস্ত করছেন তিনি।
গ্রামের আব্দুন নুর, সিরাজুল ইসলাম (মোতাওয়াল্লী), আব্দুল মান্নান, মসজিদ কমিটির সহ-সভাপতি হারুনুর রশিদ, ইউসুফ আলীসহ লোকজন জানান, আশিকুল ইসলাম দেশে আসার পর থেকে গ্রামে মামলা-মোকদ্দমা, মারামারির সৃষ্টি হয়েছে। মসজিদের প্রায় ৬০ শতক জমি দখলে নিতে চায় আশিকুল ইসলাম।
তারা জানান, মসজিদ-মাদ্রাসায় আশিকুল ইসলাম পরিবারের তেমন কোনো অবদান নেই। মসজিদ-মাদ্রাসার উন্নয়ন কাজে সব সময়ই বাধা বিঘ্ন ঘটিয়ে যাচ্ছে তারা। মারামারির ঘটনাকে কেন্দ্র আলেম-ওলামাদের আসামি করায় গ্রামসহ পুরো এলাকা জুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী। এসব বিষয়কে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে আরো ২টি মারামারির ঘটনা গ্রামে ঘটেছে।
আইনাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম জানান, ৩০ মার্চ মসজিদের বিভিন্ন উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সময় মসজিদ কমিটির ১২ জন সদস্যের মধ্যে ১০ জন উপস্থিত ছিলেন। সভায় ২ জনের অনুপস্থিতি ও সময় দেয়া-নেয়া নিয়ে বাকবিতণ্ডা ও সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়েছে। পরে উভয় পক্ষ মামলায় জড়িয়েছেন। আশিকুল ইসলাম মসজিদ-মাদ্রাসার ভূমি নিজের বলে কখনো দাবি করেননি।
এ ব্যাপারে সিংচাপইড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন মোহাম্মদ সাহেল জানান, ঘটনাটি নিষ্পত্তির জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। নিষ্পত্তি হয়নি, প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।