চা শ্রমিকদের আন্দোলনে এপর্যন্ত ৬০ কোটি টাকার ক্ষতি

দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরী ও নিজেদের জীবনমান উন্নয়নের দাবিতে চা শ্রমিকদের চলমান আন্দোলন এবং উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আগামী ১৬ আগস্ট শ্রীমঙ্গল আসছেন শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। ওইদিন বেলা ১১টায় তিনি চা শ্রমিকদের সাথে বসবেন, তাদের সাথে কথা বলবেন।

এ বিষয়ে শ্রম দপ্তর থেকে লিখিত আকারে একটা চিঠি প্রস্তুত করা হচ্ছে। যা চা শ্রমিক ইউনিয়ন নেতাদের কাছে পাঠানো হবে।

এদিকে বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী চা শ্রমিকদের কর্মঘন্টা ৮। এই ৮ ঘন্টায় ক্ষতি হচ্ছে অন্তত ৩০ কোটি টাকা। তার মানে প্রতি ঘন্টায় ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ৩ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা।

এর আগে মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) থেকে শুক্রবার (১২ আগস্ট) প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে সব বাগানে কর্মবিরতি পালন করে চা শ্রমিকরা। হিসেব অনুযায়ী প্রতি ২ ঘন্টায় ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৭ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। সব মিলিয়ে এই ৪দিনে চা বাগানের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। আর দাবি আদায় না হওয়ায় শনিবার (১৩ আগস্ট) সকাল থেকে শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করেন। সে হিসেবে শনিবার (১৩ আগস্ট) কর্মঘন্টা হিসেবে ৮ ঘন্টায় ক্ষতি হয়েছে ৩০ কোটি টাকা। আন্দোলনের এই ৫ দিনে মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৬০ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্য মতে, একজন চা শ্রমিক চা গাছ থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪০-১০০ কেজি পর্যন্ত কাঁচা চা পাতা সংগ্রহ করে থাকেন। যা একজন শ্রমিকের কর্মক্ষমতার উপর নির্ভর করে। দক্ষতার ভিত্তিতে অনেক চা শ্রমিক ১০০ কেজি পর্যন্ত কাঁচা চা পাতা সংগ্রহ করতে পারে। তবে ২৪ কেজি হচ্ছে তাদের নির্ধারিত টাস্ক। নির্ধারিত এই টাস্কের মূল্য হচ্ছে ১২০ টাকা। ২৫ কেজির উপরে অতিরিক্ত চা সংগ্রহ করলে তার বাড়তি মূল্য দেওয়া হয়ে থাকে। এই বাড়তি মূল্যটা চা বাগান কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত করে থাকেন। যা কেজি প্রতি ৪-৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কোন চা বাগান কর্তৃপক্ষ একজন চা শ্রমিককে ২৪ কেজির বাড়তি চা পাতা সংগ্রহ করলে কেজি প্রতি ৪ টাকা থেকে ৪.৩০ পয়সা দিয়ে থাকেন। আবার কোন চা বাগান কর্তৃপক্ষ বাড়তি চা পাতা সংগ্রহের জন্য প্রতি কেজিতে ৫ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে থাকেন।

তাছাড়া ১ কেজি মেইড টি তৈরি করতে ৪ কেজি কাঁচা চা পাতার প্রয়োজন হয়। যার আনুমানিক মূল্য দাঁড়ায় ২০০ টাকা।

বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের উপ-পরিচালক নাহিদুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে জানান, রবিবার (১৪ আগস্ট) সাপ্তাহিক বন্ধের দিন হলেও শ্রমিকদের আগ্রহ থাকলে ঐচ্ছিক কাজ করার সুযোগ আছে। কিন্তু অনেক চা শ্রমিক কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করলেও আন্দোলনকারীর বাঁধার মুখে পড়ে কাজে আসতে পারছেন না।

তিনি বলেন, চা পাতা গাছ থেকে সংগ্রহ করার পর ১৬ ঘন্টা বাতাসে শুকাতে হয়। তারপর প্রক্রিয়াজাত করতে হয়। শুক্রবার (১২ আগস্ট) গাছ থেকে শ্রমিকদের সংগ্রহ করা প্রচুর কাঁচা চা পাতা পড়ে আছে। শ্রমিকরা কাজ করতে না যাওয়ায় চা পাতাগুলো নষ্ট হচ্ছে। শ্রমিকরা কাজে না ফেরার কারণে সেটা কিন্তু হচ্ছে না।

উল্লেখ্য, দৈনিক মজুরি ১২০ টাকায় জীবন জীবিকা না চলায় মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে ধর্মঘট পালন করছেন চা শ্রমিকরা। দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা দাবির তাদের এ আন্দোলন।

মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) থেকে বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে সব বাগানে কর্মবিরতি পালনের পাশাপাশি বিক্ষোভ সমাবেশেরও আয়োজন করা হয়। তাতেও দাবি আদায় না হওয়ায় শনিবার (১৩ আগস্ট) সকাল থেকে শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করেন। তবে রোববার সাপ্তাহিক ছুটি ও সোমবার জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দুদিন আন্দোলনে বিরতি দিয়েছেন তারা। এর মধ্যে দাবী আদায় না হলে মঙ্গলবার থেকে ফের শুরু হবে চা শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট।