সিলেটে টানা বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় প্রায় ৪ হাজার হেক্টর ধান, বীজতলা ও সবজি ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্রুত বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বেন সিলেটের বন্যা কবলিত ৬ উপজেলার ১০ সহস্রাধিক কৃষক। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে সামনের দিনগুলোতে।
ভারতের আসাম ও মেঘালয় উপত্যকায় টানা বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকাসহ ১০ উপজেলায় বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সীমান্ত নদী সুরমা, কুশিয়ারা, সারী, ধলাই, গোয়াইন পিয়াইন উপচে পানি প্রবেশ করে হাওর ও লোকালয়ে। আর এতে ৩/৪ ফুট করে পানির নিচে তলিয়ে যায় বিস্তীর্ণ ফসলি জমিতে আবাদ করা পাকা বোরো ধান, আউশের বীজতলা আর গ্রীষ্মকালীন সবজির মাঠ। এছাড়া পেয়ারা, কলা বাগানসহ অন্যান্য ফলের বাগান তলিয়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা।
বন্যার পানি কমলেও বীজতলা নষ্ট হওয়ায় এবার আর আউশের ফলন ঘরে তুলতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। ফলে বছরজুড়ে খালি থাকবে আউশের মাঠ। যার প্রভাব পড়বে চালের বাজারে।
বিশ্বনাথের তালিবপুরের কৃষক লায়েক আহমদ নোমান বলেন, আমার ১০ একরের বেশি কলার বাগান তলিয়ে গেছে। এছাড়া পেয়ারা বাগানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গ্রীষ্মকালীন সবজির মাঠ নষ্ট হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। বন্যা পরবর্তী ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারি প্রণোদনা পেলে বিকল্প সবজি চাষের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়াতে চান তারা। তবে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা যাতে বঞ্চিত না হন, সে বিষয়টি নিশ্চিত করা দরকার বলে অভিমত তাদের।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এর মধ্যে পাকা বোরো ধান ডুবেছে ১৭০৪ হেক্টর, আউশ বীজতলা ডুবেছে ১৩০১ হেক্টর, সবজি ডুবেছে ১০০৪ হেক্টর। দ্রুত বন্যার পানি নামলে কিছুটা বোরোধান কৃষকের গোলায় তোলা সম্ভব হলেও আউশ ও গ্রীষ্মকালীন সবজি নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা জোরালো হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, সিলেটের উপ-পরিচালক কাজী মুজিবুর রহমান বলেন, বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকার সব ধরনের সহায়তা করবে কৃষকদের।
এদিকে বন্যা পরবর্তী সংকট মোকাবিলায় কৃষকসহ ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সহায়তা দেয়ার আহবান জানিয়েছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ট্রাস্ট অব বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান দেলওয়ার হোসেন খান।
বন্যার পানি নামার সাথে সাথে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে সিলেটের কৃষক পরিবারকে প্রণোদনার মাধ্যমে ঘুরে দাড়াতে সরকারি সহযোগিতার দাবি সংশ্লিষ্টদের।