বাংলাদেশ যতখানি খেলেছিল, নিউজিল্যান্ড ঠিক ঠিক এক বলই বেশি খেললো। মাঝে উইল ইয়াং ফিরে গেলেও চাপ বাড়েনি। টম ব্লান্ডেলকে নিয়ে ম্যাচটা শেষ করেছেন হিনরি নিকোলস। ৫০ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। ৭ উইকেটের এই জয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করল নিউজিল্যান্ড। আর বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ পেল একরাশ হতাশা।
ওয়ানডে ক্রিকেটে ১৭২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে যেকোনো দলেরই বেগ পাওয়ার কথা নয়। বেগ পেতে হয়নি নিউজিল্যান্ডেরও। বাংলাদেশের চেয়ে দুই বল বেশি খেলে, অর্থাৎ ৩৪.৫ ওভারে মাত্র তিন উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে নোঙর করে কিউইদের ইনিংস। ফলে টাইগারদের সাত উইকেটে হারিয়ে ২-০তে সিরিজ জয় করল নিউজিল্যান্ড।
বাংলাদেশের দেয়া লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো হয় ব্ল্যাক ক্যাপসদের। তবে ৪৯ রানে পরপর দুই উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম। ব্যক্তিগত ২৮ রানে ওপেনার ফিন অ্যালেন ফেরার পরের বলে সাজঘরের পথ ধরেন ডিন ফক্সক্রফ্ট।
এর পরের উইকেটটি পড়ে দলীয় ১৩০ রানের মাথায়। নাসুমের ঘুর্ণিতে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে ৭০ রান করেন উইল ইয়ং। পরে চার ও পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নামা হেনরি নিকোলস ৫০ ও টম ব্লান্ডেল ২৩ রানে অপরাজিত থেকে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন।
এর আগে টস জিতে আজ আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সাকিব-লিটনের অনুপস্থিতিতে টাইগারদের নেতৃত্ব দেয়া নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে শুরু ব্যাট করতে নেমে সাড়ে ৩৪ ওভারেই গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশের ইনিংস। সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৭১ রান তুলতে সক্ষম হয়েছেন ব্যাটাররা।
এর মধ্যে অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাট থেকেই এসেছে বলার মতো একটি স্কোর। ৮৪ বল খেলে দশটি চারের সাহায্যে ৭৬ রান তুলেছেন তিনি। বাকিদের অবস্থা হযবরল।
আজ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে অভিষেক হয়েছে জাকির হোসেন। তবে অভিষেকটা রঙিন হয়নি বাঁহাতি এই ওপেনারের। অ্যাডাম মিলনের বলে বোল্ড হয়ে ৫ বলে ১ রান করে ফিরতে হয়েছে তাকে। জাকিরের পর তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে তানজিদ হাসান তামিমও সাজঘরে ফিরলে মাত্র আট রানে দুই উইকেট হারিয়ে খানিকটা চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। পরে কয়েকটি অধিনায়ক শান্ত তাওহীদ হৃদয়, মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহকে নিয়ে উইকেটে থিতু হওয়ার চেষ্টা করলে খুব বড় জুটি তিনি কারও সঙ্গেই গড়তে পারেননি। আর শেষ দিকের ছিল ব্যাটারদের একের পর এক যাওয়া-আসা। ফলে ইনিংস বেশি বড় করতে পারেনি বাংলাদেশ।
তাওহীদ হৃদয়ের সঙ্গে শান্তর জুটিতি ভালো কিছুরই ইঙ্গিত দিয়েছিল। তবে সেটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। দলীয় ৩৫ রানে ফিরে যান হৃদয়। অ্যাডাম মিলনের অফসাইডের বাইরে করা বলটি কভারের ওপর দিয়ে উঠিয়ে দিতে চেয়েছিলেন হৃদয়। কিন্তু গতির অভাবে তা পয়েন্ট অঞ্চলে ক্যাচ হয়ে যায়। উইল ইয়াং তা লুফে নিলে ১৭ বলে ১৮ রান করে ফিরতে হয় হৃদয়কে।
এরপর মুশফিকুর রহিম ক্রিজে এসেই দুই ছক্কা হাঁকিয়ে বড় সংগ্রহের আভাস দেন। তবে লকি ফার্গুসনের বলে ইনসাইড এজে বোল্ড হয়ে ফিরতে হয় তাকেও। অবশ্য মুশফিকের সঙ্গে শান্তর এই জুটিটিই ইংনিস সেরা ৫৩ রানের জুটি।
মুশফিক ২৫ বলে ১৮ রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরলে উইকেটে আসেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এর মধ্যে ৫৫ বলে নিজের হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন শান্ত। আর ওয়ানডেতে নিজের পাঁচ হাজার রান পূর্ণ করেন মাহমুদুল্লাহ। তবে এর কিছু পরই মিলনের বলে উইকেটের পেছনে টম ব্লান্ডেলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রিয়াদ। ২৭ বলে ২১ রান করে ফিরলে শান্তর সঙ্গে তার ৪৯ রানের জুটির সমাপ্তি ঘটে।
আরও পড়ুন : বিশ্বকাপের দল ঘোষণা : তামিম বাদ, রয়েছেন মাহমুদউল্লাহ
এরপর শুরু হয় বাকি ব্যাটারদের ক্রিজে আসা-যাওয়ার মিছিল। সেই মিছিলে যোগ দেন শেখ মেহেদী, নাসুম আহমেদ, হাসান মাহমুদ, শরীফুল ইসলাম ও খালেদ আহমেদ।
এর মধ্যে ওয়ানডেতে নিজের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি শেষ করে ফিরে যান অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক হওয়া শান্তও। তিনি ফিরে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ- ১৭১/১০ (৩৪.৩ ওভার) (শান্ত ৭৬; মিলনে ৪/৩৪)।
নিউজিল্যান্ড: ১৭৫/৩ (৩৪.৫ ওভার) (ইয়ং ৭০, নিকোলস ৫০*; শরিফুল ২/৩২)।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : অ্যাডাম মিলনে।