ঘনিয়ে আসছে ‘ব্যাটল অব খেরসন’

ইউক্রেনে চলা ভয়াবহ যুদ্ধে রাশিয়ার দখল করা একমাত্র প্রাদেশিক রাজধানী ও বৃহত্তম ভূখণ্ড হলো খেরসন। বিশাল অঞ্চলটি পুনরুদ্ধারে দিনকে দিন ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের পাল্টা আক্রমণ অনেকটা দিশেহারা রুশ বাহিনী। বিশ্লেষকরা বলছেন, খেরসনকে কেন্দ্র করে সামনে একটা প্রবল যুদ্ধ অপেক্ষা করছে, যার কারণে অঞ্চলটির বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার অনুমোদনও দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

কৃষ্ণ সাগরের উপকূলে অবস্থিত ইউক্রেন-রাশিয়ার জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ খেরসন। ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর দিকেই অঞ্চলটি দখলে করে নেয় রাশিয়া। এখন পরিস্থিতি বদলাচ্ছে, কিয়েভ তার হারানো ভূখণ্ড ফিরে পেতে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছে রুশ বাহিনীর ওপর।

ইউরোপে শীত পড়তে শুরু করেছে। ভারী তুষারপাত শুরু হলে অঞ্চলটিতে যুদ্ধ করাটা কঠিন হয়ে পড়বে। শুক্রবার বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শীত জেকে বসার আগেই প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থার প্রস্তুতির জন্য খেরসনের একটি অংশ ছেড়েও দিতে পারে মস্কো।

খেরসনকে ঘিরে দিনেপ্রো নদীর আশপাশে অনেক শহর আর গ্রাম ছড়িয়ে রয়েছে। নদী হয়ে খেরসনের অনেক বাসিন্দাকে সরিয়ে নিয়েছে মস্কো সমর্থিত প্রশাসন। তাদেরকে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডে নেওয়ার দাবি করা হয়েছে।

গ্রীষ্মকাল থেকেই খেরসন পুনরুদ্ধারে ছক একে এগুচ্ছে ইউক্রেন। ইউক্রেনীয়রা খেরসন পুনরুদ্ধারে ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস বলেই মনে হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, একটি বিজয় দরকার। এটি শুধু ইউক্রেনের নাগরিকদের মনোবল চাঙা রাখার জন্যই নয়, মিত্রদের আশ্বস্ত করার জন্য যে ইউক্রেন একটি যুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে আনতে জানে।

বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন রাশিয়ার কাছ থেকে খেরসন পুনরুদ্ধারের সামর্থ্য ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর রয়েছে। ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর সামরিক অভিযানকে তিনি ‘পরিকল্পিত’ এবং ‘কার্যকর’ বলেও উল্লেখ করেছেন।

অস্টিন আরও বলেন, নিজেদের সার্বভৌম ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারে আমরা তাদেরকে খুব পরিকল্পিত কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখেছি। আমি মনে করি, পশ্চিম তীরের ভূখণ্ড মুক্ত করার আগ পর্যন্ত তারা অভিযান চালিয়ে যাবে। ফলে ইউক্রেন খেরসন মুক্ত পারবে কিনা প্রশ্নের জবাব হলো আমি মনে করি তাদের সামর্থ্য রয়েছে।

তবে সব কিছু এতটা সহজ হবে বলছেন না খেরসন ও মাইকোলাইভের ফ্রন্টলাইনে থাকা এক ইউক্রেনীয় সেনা। তিনি বলেন, ‘এখানে অগ্রগিত খুবই কঠিন। সামনে অগ্রসরের জন্য অনেক শক্তি প্রয়োগ করতে হবে। তবে আপাতত আমাদের কাজ হলো নিজেদের অবস্থান ধরে রাখা। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আক্রমণ করে যাচ্ছি শত্রুপক্ষের ওপর। এটা খুবই কঠিন এবং ধীরগতির। তাদের কাছে অনেক বেশি সামরিক সরঞ্জাম, লোক এবং গোলাবারুদ রয়েছে। কিন্তু তাদের জনবল প্রশিক্ষিত নয়। তারা হুররা বলে চিৎকার করে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। আমাদের কাছে এত গোলাবারুদ নেই।’

ইতোমধ্যে এ লড়াইয়ে উভয়পক্ষের কয়েক হাজারো সেনা প্রাণ হারালেও সঠিক পরিসংখ্যান নেই। কারণ কোনও পক্ষই প্রকৃত হতাহতের সংখ্যা সামনে আনেনি।

আপাতত খেরসন এখনও মস্কোর দখলে রয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। পুরো শরৎজুড়ে, রাশিয়া সেখানে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করতে সক্ষম হয়। ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা অধিদফতরের প্রধান জেনারেল কিরিলো বুদানভ সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, খেরসনে রাশিয়ার দুর্দান্ত ইউনিট রয়েছে, যেখানে মেরিন, বিমান ও বিশেষ বাহিনী আছে।

এমন বাস্তবতায় ইউক্রেনের পক্ষ থেকে কঠোর পাল্টা আক্রমণের সক্ষমতা না থাকলে রাশিয়া খেরসন ছেড়ে দেবে বলে মনে হয়। যদিও পশ্চিমা সমর্থনে খেরসনে ক্রমেই আক্রমণ জোরালো করছে কিয়েভ। যুক্তরাষ্ট্র ভারী অস্ত্র সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জেলেনস্কির সরকারকে। ইউরোপের মিত্র দেশগুলোও ইউক্রেনকে সামরিক এবং মানবিক সহায়তা দেওয়া অব্যাহত রেখেছে। সব মিলিয়ে খেরসন পুনরুদ্ধারে বড় একটা আশা রাখতেই পারে কিয়েভ।

খেরসন রণক্ষেত্রে নিজেদের সেনাবাহিনীর অগ্রগতির বিষয়ে চরম গোপনীয়তা বজায় রাখছে ইউক্রেন। পাশাপাশি রাশিয়ার পিছু হটার বিভিন্ন খবরে তারা সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আসছে। গত সপ্তাহে তারা বলেছে, রুশ সেনা প্রত্যাহারের কোন ইঙ্গিত দেখতে পায়নি রণক্ষেত্রের যোদ্ধারা। বাস্তবে নিজেদের সেনা মোতায়েন বাড়াচ্ছে।

সূত্র: বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে