গোলাপগঞ্জে যুবককে মারধর করে তালাবদ্ধ করে রাখলেন চেয়ারম্যান!

সিলেটের গোলাপগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদে সেবা নিতে আসা কামরুজ্জামান মাসুদ নামের এক যুবককে মারধর করে রুমে তালাবদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যান আব্দুল হানিফ খানের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় যুবককে ঘাড় ধরে টেনেহিঁচড়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বের করে দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। গতকাল রোববার (১৬ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার ফুলবাড়ি মডেল ইউনিয়ন পরিষদে এ ঘটনা ঘটে।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায় চেয়ারম্যান আব্দুল হানিফ এক ব্যাক্তিকে প্রথমে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাইরে নিয়ে যান। এসময় ওই ব্যাক্তিকে বলতে শুনা যায়, ‘হানিফ ভাই আপনে যা কররা ভুল কররা, আমি এমন কিতা করলাম যে আপনে আমার লগে এমন ব্যবহার করলা।’ পরবর্তীতে আবারও ইউনিয়ন পরিষদের বাইরে থেকে ওই ব্যক্তিতে ঘাড় ধরে ইউনিয়ন পরিষদের ভিতরে নিয়ে যান চেয়ারম্যান।

এদিকে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে নেটিজেনদের চেয়ারম্যানের এই রকম কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতে দেখা গেছে।

মারধরের শিকার যুবক কামরুজ্জামান মাসুদ বলেন, আমার দোকানের ট্রেড লাইসেন্সের জন্য ইউনিয়ন অফিসে গিয়েছিলাম। তখন ইউনিয়নের সচিব বেশি টাকা বলেন, ওই সময় আমি ওনাকে বলি যে এত টাকা হওয়ার কথা না, গত বছর আমি সাড়ে তিনশ টাকা দিয়ে নিয়েছি। এবছর এত টাকা হবে কেন বললে তিনি বলেন সাত পার্সেন্ট বাড়ছে। আমি আরও মনে করেছি ৩৬০-৭০ টাকা হবে। তখন আমি বলছি তাহলে চারশ টাকা নিয়ে নেন। তখন তিনি বলেন, না এই টাকায় হবে না। চেয়ারম্যান যা বলছেন তা দিতে হবে। তা না হলে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হবেনা।

তিনি আরও বলেন, ইউনিয়নের সচিব চেয়ারম্যানকে ফোন দিয়ে আনেন। তিনি এসেই উত্তেজিত হয়ে মারধর করে আমাকে ইউনিয়ন থেকে বের করে দেন। পরে আবার টেনেহিঁচড়ে ভিতরে নিয়ে এক রুমের ভিতর তালাবদ্ধ করেন। এরপর আমাকে অনেক মারধর করা হয়। পরবর্তীতে আমার আত্মীয় স্বজন এসে আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান। এরপর আমি চিকিৎসার জন্য ওসমানী হাসপাতালে এসে ভর্তি হই। আমি এঘটনার সুষ্ঠ বিচার চাই।

এবিষয়ে ফুলবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হানিফ খান বলেন, ইউনিয়নের সচিব ও সহকারীর সাথে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে কথাকাটাটি হয় মাসুদের। একপর্যায়ে সে তাদেরকে মারধর করে। তখন আমি ইউনিয়ন পরিষদে ছিলাম না। সচিব সাহেব আমাকে কল দিয়ে বলেন এরকম একটি ঘটনা ঘটেছে, আপনি আসবেন না আমি ইউএনও স্যারকে বলব। আমি ইউনিয়ন পরিষদের বারান্দায় উঠার আগেই সচিব আমাকে বিষয়টি জানাতে চাইলে মাসুদ একটি রুম থেকে দৌড়ে বের হয়ে এসে আমার সামনে সে সচিবকে পুনরায় লাঞ্ছিত করে।

তিনি বলেন, যখন আমার সামনে সে সচিবকে লাঞ্ছিত করে তখন আমি তাকে বাধা দেই। তখন আমি তাকে বুঝাই যে, চেয়ারম্যানের বাইরেও আমি তোমার বড় ভাই। তুমি আমার এলাকার। তখন আমি অভিভাবক হিসেবে তাকে বলছি যে তুমি বের হয়ে যাও। বাইরে যাওয়ার পর সে খারাপ একটি ভাষা ব্যবহার করেছে। তখন আমি আবারও তাকে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসি। তারপর এলাকার মুরব্বিদের সাথে নিয়ে বিষয়টি সমাধান করি।

ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায় আপনি ওই ব্যাক্তি ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিচ্ছেন, বিষয়টি নিয়ে মানুষ অনেক সমালোচনা করছে, সমালোচনার বিষয়টি আপনি কি ভাবে দেখছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে মূলত ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করার জন্য নয়। সে তো মূলত আমার এলাকার ছোট ভাই। আমি কিন্তু তাকে সেইভ করার জন্য এমনটি করেছি। কারণ সে স্বাভাবিক হোক বা অস্বাভাবিক ভাবে হোক যে অবস্থা সৃষ্টি করেছিল জনগণ তাকে টর্চারিং করতে পারত। এর বেশি আমার আর কিছু করার ছিল বলে মনে করি না।

তিনি বলেন, কে বা কারা ভিডিওটি ভাইরাল করছে জানি না। আমার ইউনিয়নেও সিসিটিভি আছে। তবে সিসিটিভিতে বর্তমানে কাজ চলছে। যদি ভাল থাকতো তাহলে আমিও ভিডিও ভাইরাল করে দিলে সবাই প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কি হয়েছিল বুঝতে পারতেন।

সিলেট ভয়েস/এএইচএম