সুনামগঞ্জের শাল্লায় ভূয়া প্রকল্প তৈরি করে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। একটি গোয়ালঘরকে মক্তব দেখিয়ে ভূয়া প্রকল্পে ৯০ হাজার টাকা বরাদ্দ এনেছেন স্থানীয় এক ইউপি সদস্য।
উপজেলার ১নং আটগাঁও ইউপি সদস্য কামরুজ্জামান তার বাবা মৃত আলী হোসেনের নামে ভূয়া মক্তব দেখিয়ে ৯০ হাজার টাকা বরাদ্দ এনেছেন তিনি। কিন্তু স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, আটগাঁও পূর্ব পাড়ায় আলী হোসেন নামে কোন মক্তব নেই। রয়েছে আটগাঁও পূর্ব পাড়া নামে একটি মক্তব। কিন্তু পূর্বাপাড়া মক্তবের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলছেন, আমাদের পূর্ব পাড়া মক্তবে সরকারি কোন বরাদ্দ আসেনি। আলী হোসেন মক্তব নামে ইউপি সদস্য যে বরাদ্দটি এনেছেন সেটা একটি ভূয়া প্রকল্প। এই এলাকায় আলী হোসেন নামে কোন মক্তব নেই।
তবে সরকারি বরাদ্দ আসার ব্যাপারে গ্রামের কেউই কিছু জানেন না। পরিত্যক্ত গোয়ালঘরকে মক্তব দেখিয়ে ভূয়া প্রকল্প আনায় সমস্ত এলাকাজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ কামরুজ্জামান মেম্বার ও পিআইও মিলে সেই ভূয়া প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইউপি সদস্য কামরুজ্জামানের বাড়ির আশেপাশে কোন মক্তব নেই। মক্তব কোথায় জানতে চাইলে, মক্তব হিসেবে পরিত্যক্ত একটি ঘর দেখান তিনি। সেই ঘরে ঢুকে দেখা যায় গরু-ছাগলের বসবাস। সেই ঘরটির ছবি ও ভিডিও ধারন করতে চাইলে নিষেধ করেন ইউপি সদস্য কামরুজ্জামান।
জানা যায় বরাদ্দকৃত জায়গাটি পরিদর্শন না করে ও না দেখেই ১ম কিস্তির পয়তাল্লিশ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করেছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা।
নিয়মানুযায়ী মক্তব উন্নয়নের জন্য প্রকল্প অনুমোদন করতে গেলে বরাদ্দকৃত জায়গায় মক্তব থাকতে হয়, পরিপত্র অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ করার সময় প্রকল্পের নাম, টাকার পরিমাণ ইত্যাদি উল্লেখ করে প্রকল্প এলাকায় সাইনবোর্ড টাঙাতে হয়। কিন্তু সেসবের কিছুই পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা যায়, আটগাঁও গ্রামে আলী হোসেন নামে কোন মক্তব না থাকলেও স্থানীয় জাসদ মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে প্রকল্পের সভাপতি বানিয়ে প্রকল্পের ১ম কিস্তির টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। কিন্তু নীতিমালা অনুযায়ী কোন মসজিদ বা মক্তবে বরাদ্দকৃত অর্থ উত্তোলন করতে হলে সেই মক্তব বা মসজিদের সভাপতি বা মোতাওয়াল্লীকে প্রকল্পের সভাপতি বানিয়ে প্রকল্পের টাকা উত্তোলনের কথা থাকলেও তা উপেক্ষা করে টাকা তোলা হয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ কামরুজ্জামান মেম্বার স্থানীয় এমপি ড.জয়া সেনগুপ্তার অনুসারী হওয়ায় এলাকায় বিস্তর প্রভাব কাটিয়ে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত রয়েছেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, আটগাঁও পূর্বপাড়ায় একটি মক্তব রয়েছে। সেখানে কোন বরাদ্দ নেই। তিনি বলেন আলী হোসেন মক্তব নামে যে বরাদ্দ এসেছে এটি ভূয়া প্রকল্প। এই প্রকল্পের টাকা ইউপি সদস্য কামরুজ্জামান জামান ও পিআইও আত্মসাৎ করেছে বলে তার অভিযোগ।
আটগাঁও পূর্বপাড়া মক্তবের ইমাম শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি পূর্বপাড়া মক্তবের ইমাম। আমি এখানে সাড়ে নয়মাস যাবত ধরে আছি। আলী হোসেন নামে এখানে কোন মক্তব নেই। এবং আটগাঁও পূর্বপাড়া মক্তবে কোন বরাদ্দ নেই বলে জানান তিনি।
আটগাঁও গ্রামের বাসিন্দা সুয়েব চৌধুরী বলেন, এসব ভূয়া প্রকল্পের নামে রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করা হচ্ছে। তিনি বলেন মক্তব উন্নয়ন ও নির্মাণের নামে বাটপারি ও ধান্দাবাজি করা হচ্ছে।
এবিষয়ে কথা হলে ইউপি সদস্য কামরুজ্জামান বলেন, আপনারা আমাকে যে কোন কিছুতে ধরেন, আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু এই বিষয়ে আমাকে ক্ষমা করে দেন আমি মহা-বিপদে আছি। একপর্যায়ে সাংবাদিকদের টাকা দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করেন তিনি।
আর বরাদ্দকৃত জায়গায় গোয়ালঘর দেখেছেন এই বিষয়টি স্বীকার করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ এনামুল হক বলেন, গোয়ালঘরের পাশে মাটি ফেলা হচ্ছে। তিনি বলেন, আপনারা কোনকিছু সহজভাবে নেন না। সে যদি মক্তব তৈরি না করে তাহলে আপনারা অবজেক্শন দিয়েন। বরাদ্দকৃত জায়গায় মক্তব না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন উন্নয়ন আর নির্মাণ একই কথা। বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মক্তব উন্নয়নের জন্য, সেখানে মক্তব হবে বলে জানান তিনি।
এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে দিরাই-শাল্লা’র সংসদ সদস্য ড.জয়া সেনগুপ্তা বলেন এই বিষয়টি আমি দেখবো।