আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এদেশে গুম খুন সৃষ্টি করেছেন জিয়াউর রহমান। তারা আবার গুম খুন নিয়ে কথা বলেন। আমাদের কত নেতাকর্মীকে তারা হত্যা করেছেন। ১৫ই আগস্ট শুধু আমাদের পারিবারিক ক্ষতি তা না, একটা জাতির জন্য ক্ষতি, দেশের জন্য ক্ষতি।
মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস স্মরণে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শুধু প্রকল্প নিই না। এই অর্থনীতিতে আমাদের কি কি কাজ করতে হবে সেটা চলমান থাকবে না। গতিশীলতা থাকবে কি-না? সেটা মাথায় রেখেই আমরা আমাদের বাজেট তৈরি করি, আমরা উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করি। আমাদের প্রত্যেকটা উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করার আগে চিন্তা করি এই উন্নয়ন সম্পন্ন হলে দেশের কি উন্নতিটা হবে। আমরা এইটা চিন্তা করি না যে এই উন্নয়ন নিয়েই বড় প্রকল্প এটা থেকে মোটা টাকা কমিশন খেতে পারব। সেই চিন্তা করে শেখ হাসিনা কোনো প্রকল্প নেয় না, এটা হলো বাস্তব। আমাদের চিন্তা হচ্ছে এই প্রকল্প করলে দেশ কি পাবে, দেশের মানুষ কি পাবে, দেশের মানুষের কি আসবে। আমরা কিন্তু সেই পরিকল্পনা করি। সেইভাবে পরিকল্পনা করেই আমরা এগোচ্ছি।
তিনি বলেন, যখন এগিয়ে যাচ্ছি তখন যুদ্ধ লাগল, একে তো করোনা তারপর যুদ্ধ। সাথে সাথেই বাজেট এবং উন্নয়ন প্রকল্পের প্রত্যেকটা এ, বি, সি, ডি, করে পরিকল্পনা করে দিয়েছি। কোনটা দ্রুত শেষ হবে সেখানে বেশি অর্থ দিয়ে দ্রুত শেষ করে দেওয়া যাতে তার ফলাফলটা মানুষের কল্যাণে হয়। কোন গুলো নিলে আমাদের ক্ষতি নাই সেভাবেই কাজ করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কখনও ধার করে ঘি খাই না। আমাদের এমন অবস্থা না যে কারো কাছে আটকা পড়ে যাব। যেখান থেকে ঋণ নিচ্ছি সময় মতো পরিশোধ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশের সেই সক্ষমতা আছে। পরিকল্পিতভাবে প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি বলেই তো এতো বাধা বিপত্তি এতো কিছু বিএনপির অগ্নি সন্ত্রাস। রেল গাড়ি কিনলাম সেগুলো জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিল, বাস জ্বালিয়ে দিল, জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মেরেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, মানবতার কথা বলে যারা অগ্নি সন্ত্রাস করে জীবন্ত মানুষকে হত্যা করে তাদের মুখে থেকে মানবতার কথা শুনতে হয়। তাদের মুখে আমরা মানবাধিকারের কথা শুনি। যেখানে সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার দেয়নি। সেই সমস্ত পোড়া মানুষ পঙ্গু হয়ে আছে জীবনে কাজ করতে পারে না। আমি সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করে যাচ্ছি। আজ তাদের মুখেই মানবতার কথা শুনতে হয়। এই অবস্থা সৃষ্টি করেছিল তারা। এর আগে ২০১৩ তে ২০১৪ তে ২০১৫ তে একটার পর একটা ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা কর গেছে। এখনও তারা করে যাচ্ছে।
আলোচনা অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভাপতি বক্তব্যের শুরুতে ১৫ আগস্ট এর কথা স্মরণ করতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। এ সময় তিনি ১৫ আগস্ট বাবা মা হারানো যুবলীগের সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকে কাছে ডেকে নেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, পরশ এদিকে আয়। পরে শেখ পরশ স্টেজে উঠে আসেন এবং ছোট ভাই তাপসকে জড়িয়ে ধরে আবেগ আপ্লুত হয়ে চোখ মুছতে থাকেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন এই যে পরশ এখন বড় হয়ে গেছে। সেদিন ওদের মা দুইটা শিশুর কথা চিন্তা করেননি, নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। আমরা যারা স্বজন হারিয়েছি, আমরা তো বিচারও চাইতে পারিনি, বিচার চাওয়ার অধিকার রাখেনি, আজকে মানবাধিকারের কথা বলা হয়।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, যারা মানবাধিকারের কথা বলেন তাদের কাছে আমার প্রশ্ন ছোট শেখ রাসেল কি অপরাধ করেছিল? তাকে কেন হত্যা করা হয়েছিল? আপনারা সেই খুনিদের আশ্রয় দিয়েছেন। বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলার আগে খুনিদের অবিলম্বে ফেরত দিন।
আওয়ামী লীগ সভাপতির উদ্দেশে করে মেয়র আতিক বলেন, অবিলম্বে পলাতক খুনিদের দেশে ফিরে এনে ফাঁসি কার্যকর করুন। জাতির পিতার হত্যাকারীদের সব স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হোক। হত্যার পেছনে যারা খুশিলব হিসেবে কাজ করেছে তাদের খুঁজে বের করতে কমিশন গঠন করুন।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী। আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন— ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ ফজলুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য সাদেক খান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান কচি।