এখন পর্যন্ত কোন দেশ যা করতে পারেনি, তাই করে দেখিয়েছেন কোরিয়ার পরমাণুবিজ্ঞানীরা। পৃথিবীতে ১০০ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা তৈরি করে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন তারা।
গবেষকেরা ঘোষণা দিয়েছেন, নিউক্লিয়ার ফিউশন নিয়ে পরীক্ষার সময় তাঁরা এ রেকর্ড গড়েন। তাঁদের দাবি, ভবিষ্যৎ জ্বালানি প্রযুক্তির জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
নিউক্লিয়ার ফিউশনপ্রক্রিয়ায় নিউক্লীয় বিক্রিয়া ঘটিয়ে একাধিক হালকা নিউক্লিয়ার সংযোজন করে তুলনামূলক ভারী নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। পাশাপাশি এ প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয় বিপুল শক্তি। মূলত সূর্যের নিউক্লিয়ার ফিউশনের প্রক্রিয়া অনুকরণ করছেন ওই বিজ্ঞানীরা।
এই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে জলবায়ু সমস্যা সমাধান করা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এর কারণ, এ শক্তি পরিবেশবান্ধব। বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য দায়ী কার্বনদূষণ ছাড়াই ফিউশনপ্রক্রিয়ায় অন্তহীন শক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে পৃথিবীর বুকে এই প্রক্রিয়া আয়ত্ত করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং বলে জানিয়েছেন পরমাণুবিশেষজ্ঞরা।
কোরিয়ান ইনস্টিটিউট অব ফিউশন এনার্জির (কেএফই) রিসার্চ সেন্টার কেএসটিএআরের পরিচালক সি উ ইউনের দাবি, ফিউশন শক্তি পাওয়ার সবচেয়ে সাধারণ উপায় হচ্ছে টোকামাক নামে একটি ডোনাট আকারের চুল্লির ব্যবহার।
এতে হাইড্রোজেন রূপগুলোকে একটি প্লাজমা তৈরি করার জন্য উচ্চ তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করা হয়। উচ্চ তাপমাত্রা এবং উচ্চ ঘনত্বের প্লাজমা হলো পারমাণবিক ফিউশন রিঅ্যাক্টের ভবিষ্যতের চাবিকাঠি বলে জানান তিনি।
কেএসটিএআর রিসার্চ সেন্টার ১০০ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে।
সি উ ইউন বলেন, ফিউশনের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়া হতে পারে; কারণ, উচ্চ তাপমাত্রার প্লাজমার অস্থিতিশীল প্রকৃতির কারণে এই উচ্চ তাপমাত্রা বজায় রাখা খুব একটা সহজ নয়। তাই সাম্প্রতিক এই রেকর্ড এত তাৎপর্যপূর্ণ।
গবেষকেরা বলছেন, কেএসটিএআরের পক্ষ থেকে উচ্চ তাপমাত্রার ওই প্লাজমাকেই কৃত্রিম সূর্য বলা হচ্ছে।
গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে চালানো পরীক্ষায় এই কৃত্রিম সূর্যে সর্বোচ্চ ৪৮ সেকেন্ড পর্যন্ত ১০০ মিলিয়ন ডিগ্রি তাপমাত্রা পাওয়া গেছে।
এর আগে ২০২১ সালের চালানো পরীক্ষায় এ রেকর্ড ছিল সর্বোচ্চ ৩০ সেকেন্ডের।