কোম্পানীগঞ্জে খাদ্য গুদামে ধান দিচ্ছেন ব্যবসায়ী, বঞ্চিত কৃষক

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে কৃষকদের বঞ্চিত করে পাথর ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ধান ক্রয় করে সরকারি খাদ্য গুদামে তোলার অভিযোগ ওঠেছে। শুধু তাই নয় সরকারি গুদামের কর্মকর্তাদের যোগসাজেশে গড়ে ওঠেছে একটি সিন্ডিকেট। কৃষকদের বঞ্চিত করে এই সিন্ডিকেটের কাছ থেকেই ধান কেনা হচ্ছে বলে অভিযোগ কৃষকদের।

দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চললেও সিন্ডিকেটের সবাই ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। অবশেষে গত রোববার (২৬ মে) এই সিন্ডিকেটের সকল তথ্য বেরিয়ে আসে। একই সঙ্গে উপজেলা খাদ্য গুদামের কর্মকর্তাদের যোগসাজেশ ও অনিয়মের বিষয়টি আলোচনায় ওঠে আসে।

পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিযান চালিয়ে সিন্ডিকেটের মূল হোতা পাথর ব্যবসায়ী আব্দুল আলীর গোডাউন থেকে সরকারি বস্তাভর্তি ধান ও সরকারের সীলযুক্ত খালি বস্তা জব্দ করেন।

এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এছাড়া সিলেট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে চার সদস্য বিশিষ্ট আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি খাদ্য গুদামে ধান সংগ্রহের জন্য ৩৪৫ জন কৃষক নির্বাচিত করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে প্রতিমণ ধান ১ হাজার ২৮০ টাকা দরে ক্রয় করা হচ্ছে।

জানা গেছে, কোম্পানীগঞ্জের থানা বাজার এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল আলী ও খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়ার যোগসাজেশে একটি সিন্ডিকেট গড়ে ওঠেছে। এই সিন্ডিকেটের বাইরের কোনো কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ না করে কেবল আব্দুল  আলীর কাছ থেকে ধান ক্রয় করছিলেন গোলাম কিবরিয়া। এতে তালিকায় থাকা অন্য কৃষকরা ধান সরবরাহ করার সুযোগ পাচ্ছিলেন না।

কৃষকদের অভিযোগ, কোম্পানীগঞ্জ খাদ্য গুদামের কর্তাদের সাথে থানা বাজারের পাথর ব্যবসায়ী আব্দুল আলী একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। আব্দুল আলীর গোডাউনে হাজার হাজার সরকারি বস্তা আগেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে বস্তা ভরে গাড়িতে করে নিয়ে ওজন ছাড়াই খাদ্য গুদামে ঢুকানো হয়।

কৃষকরা জানান, গত দুই সপ্তাহ ধরে প্রকৃত কৃষকরা ধান সরবরাহ করার জন্য সিরিয়াল পাচ্ছেন না। অথচ আব্দুল আলী সিন্ডিকেটের ধান ভেজা অবস্থায়ও গুদামে ঢুকানো হচ্ছে। অভিযোগ ওঠেছে, গোলাম কিবরিয়া ২ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রতি কার্ডধারীর কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করে থাকেন।

এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে রোববার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অভিযান চালিয়ে আব্দুল আলীর ৩টি গোডাউনে থাকা সরকারি বস্তাভর্তি ধান ও সরকারের সীলযুক্ত খালি বস্তা জব্দ করেন। এসময় গোডাউন তালা দেন ইউএনও। পরে তিনি ঘটনা তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন। অন্যদিকে, সিলেট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে চার সদস্য বিশিষ্ট আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন আব্দুল আলী। তিনি বলেন, তাঁর পাথরের ব্যবসা রয়েছে। ধান চাল নিয়ে কোনো সিন্ডিকেট নেই। খাদ্য গোদামে তাঁর তিন ভাই ধান সরবরাহ করেন। তাঁরা তিনজনই কার্ডধারী। এসবের সঙ্গে তিনি জড়িত না।

আব্দুল আলী বলেন, সরকারি খাদ্য গুদামে আমি ধান সরবরাহ করি না। আমি চুনাপাথরের ব্যবসা করি। আমাদের ক্ষেতের ধান আমার তিন ভাই গুদামে বিক্রি করেন। তারা তিনজনই কার্ডধারী। ইউএনও গতকালকে  (রোববার) এসেছিলেন। আমি সরকারি বস্তা ক্রয় করার কাগজপত্র দেখিয়েছি।

একই পরিবারের তিন ভাই কীভাবে কার্ড পেলেন এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা উপজেলা কৃষি অফিস নির্বাচিত করেছে। তিনি বলেন, কিছু মানুষের আক্রোশ রয়েছে আমার উপর। এজন্য এসব করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনোজ কান্তি দাস চৌধুরী বলেন, উপজেলা কৃষি অফিস কৃষকের তালিকা তৈরি করে দিয়েছে। এই তালিকাধারীদের কাছ থেকে ধান কেনা হচ্ছে। বাইরের কেউ ধান সরবরাহের সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কীভাবে ধান সংগ্রহ করছেন সেটা আমার জানা নেই। কিন্তু আমি পরিদর্শনে গিয়ে কিছু অসঙ্গতি পাওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। রোববার এ ঘটনার পর জেলা নিয়ন্ত্রকের দপ্তর থেকে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

একই পরিবারের তিন ভাই কীভাবে কার্ড পেলেন এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল মতিন বলেন, উপজেলার কতজন কৃষক ধান সরবরাহ করতে ইচ্ছুক সেটার একটা তালিকা করে আমরা খাদ্য গুদামে প্রেরণ করি। তারা যাচাই বাছাই করে ঠিক করবে কাদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করা হবে। কিন্তু তালিকা কে করলো সেটার চেয়ে এখন বড় কথা হলো সরকারি বস্তা অন্য একজন ব্যক্তির গোডাউনে গেল কীভাবে। এটা তদন্ত করা উচিত।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ বলেন, রোববার বিকালে ৩টি গোডাউন তল্লাশী করে সরকারি বস্তাভর্তি ধান পাওয়া গেছে। এসময় সরকারি বস্তা ও ধান জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে তিনদিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। কাগজপত্র দেখাতে না পারলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।