মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার একটি দাখিল মাদ্রাসায় অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) এ ব্যাপারে কুলাউড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই পদে আবেদনকারী জনি বেগম। মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও কুলাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যানকে লিখিত অভিযোগের অনুলিপি দিয়েছেন তিনি।
লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, উপজেলার জয়চন্ডি ইউনিয়নের গিয়াসনগর ইসলামীয়া দাখিল মাদ্রাসায় অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণ করা হয় গত শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি)। বেলা ২টার পরীক্ষা শুরু হয় বিকেল ৪টায়। নিয়োগ কমিটিতে উপস্থিত ছিলেন মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের ডিজি অফিসের প্রতিনিধি, কুলাউড়া উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, মাদ্রসা সুপার এবং শিক্ষানুরাগী সদস্য। কিন্তু পরীক্ষা গ্রহণ করেন শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনোয়ার, মাদ্রাসার সুপার তৈয়ীবুর রহমান এবং মাদ্রাসার শিক্ষক আবুল খায়ের। তারা ডিজি প্রতিনিধির সময় সল্পতা দেখিয়ে তড়িঘড়ি করে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেন। নির্ধারিত সময়টুকু পরীক্ষার্থীদের না দিয়ে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে উত্তরপত্র টেনে নিয়ে যান। কিন্তু যে পদের জন্য নিয়োগ দেয়া হচ্ছে, সেই কম্পিউটারের ওপর ব্যবহারিক পরীক্ষাটাই নেয়া হয়নি। তাৎক্ষণিক নিয়োগ বোর্ডের প্রধান নিজের নানা সমস্যা দেখিয়ে পরের দিন বোর্ড থেকে রেজাল্ট জানানো হবে বলে দ্রুত চলে যান। মাদ্রাসা সুপার ও শিক্ষা কর্মকর্তাও আড়াল হয়ে যান। এরই মধ্যে ৪ জন পরীক্ষার্থীর ২ জন চলে যান। নিয়োগ কর্তাদের চালচলনে সন্দেহ হলে পরীক্ষার্থী জনি বেগমসহ এলাকার বেশ কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তি মাদ্রাসার পাশে অবস্থান করেন। ঘণ্টাখানেক পর মাগরিবের আজানের সময় আবারও মাদ্রাসায় ফিরে আসেন ডিজি প্রতিনিধি, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও মাদ্রাসা সুপার। এসেই ঘোষণা করেন আবু বক্কর নামক পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন। যা শুনে সবাই অবাক হন।
এ বিষয়ে পরীক্ষার্থী জনি বেগম বলেন, আমি যখন আবেদনপত্র দিতে যাই তখন মাদ্রাসা সুপার আমাকে বলেন- ‘এখানে কোনো মহিলা নিয়োগ দেয়া হবে না। তুমি আবেদন করে কী করবে?’ মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সুপার আমার কাছে অর্থ দাবি করেছেন, কিন্তু আমি দিতে রাজি হইনি। আর এ কারণেই তাদের একান্ত ইশারা ও আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে তাদের পছন্দসই প্রার্থীকে উত্তীর্ণ দেখানো হয়। কম্পিউটারের ওপর আমার একাধিক সরকারি সার্টিফিকেট রয়েছে। কিন্তু আমি যতটুকু জানি, যাকে নির্বাচিত করা হয়েছে তিনি কম্পিউটার সম্পর্কে কিছুই জানেন না। আর এই কারণেই পরিকল্পিতভাবে ব্যবহারিক কম্পিউটার পরীক্ষাটা নেয়া হয়নি। ব্যবহারিক পরীক্ষাটা নেয়া হলে আমি অবশ্যই উত্তীর্ণ হতাম। পরীক্ষা শেষে তারা আমার রেজাল্ট শিট ও ইন্টারভিউ কার্ডটিও দেননি। বিষয়টি তদন্ত করলে সকল সত্যতা বেরিয়ে আসবে।
মাদ্রাসা সুপার মাওলানা তৈয়ীবুর রহমান এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সম্পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিকভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। তবে ডিজি অফিসের প্রতিনিধি আসতে দেরি হওয়ায় পরীক্ষা একটু দেরিতে শুরু হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার বলেন, আমরা নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দিয়েছি। কোনো অনিয়ম হলে আপনারা তদন্ত করে দেখতে পারেন।
এ ব্যাপার কুলাউড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান খোন্দকার বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।