বিসিবির পরিচালক আকরাম খানের গৃহপরিচারিকা সাহিদা বেগম (২৫) কীভাবে মারা গেলেন, সে বিষয়ে এখনো অন্ধকারে পুলিশ।
সাহিদাদের বাড়ি সিতাকুণ্ড পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের পন্থিছিলা এলাকার মহাদেবপুর গ্রামে। সাহিদার বাবা কৃষক।
বড় বোন রাসেদা বেগম জানান, চাচাতো বোনের বিয়ে উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বাড়ি আসার কথা ছিল সাহিদা বেগমের। রোববার বোনের সঙ্গে তার শেষ কথা হয়। এ সময় স্বাভাবিকভাবেই কথা হয়েছিল তার সঙ্গে। ১৩ বছর ধরে আকরাম খানের বাসায় কাজ করছিলেন সাহিদা বেগম। এ সময়ের মধ্যে অত্যাচার-নির্যাতনের কোনো অভিযোগ কখনো জানায়নি সে। বরং মামা-মামি (আকরাম খান দম্পতি) অনেক স্নেহ করতেন।
তবে তিনি জানান, রবিবার ভাই কয়েকবার ফোন দিলেও কথা বলতে পারেননি বোনের (সাহিদা) সঙ্গে। ‘হ্যালো’ বলার পর ফোনের লাইন কেটে যাচ্ছিল বারবার।
সাহিদা বেগমের বাবা নাদেরুজ্জামান বলেন, গত দু-তিন দিন ধরে মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে পারছিলাম না। মোবাইলে অনেকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। এ সময়ের মধ্যে ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করতে পারছিলাম না। হাত থেকে বারবার খাবার পড়ে যাচ্ছিল। তখন থেকে অজানা আশঙ্কায় ছিলাম।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক ও ফ্যাসিলিটিজ বিভাগের প্রধান জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার আকরাম খানের বাসার গৃহকর্মী সাহিদা আক্তারের মরদেহ সোমবার উদ্ধার করে পুলিশ।
গত রবিবার রাত ১১টার দিকে রাজধানীর মহাখালী ডিওএইচএস তিন নম্বর রোডের দুটি ভবনের মাঝখানে পড়ে থাকা অবস্থায় তার নিথর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহ উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে দাফনের জন্য মরদেহ নেয়া সীতাকুণ্ডে।
এ ঘটনায় সাহিদার ভাই ইউসুফ আলী বাদী হয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাফরুল থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেছেন।
কাফরুল থানার ওসি মো. হাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, রবিবার রাত ১১টার দিকে ডিওএইচএস তিন নম্বর রোডের দুটি ভবনের মাঝে নিচে পড়েছিল সাহিদার নিথর দেহ। কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরই বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
তিনি বলেন, ছয়তলা ভবনের পাঁচ ও ছয়তলা ডুপ্লেক্স বাসায় থাকেন আকরাম খান। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ছয়তলার ছাদ থেকে নিচে পড়ে মারা যান সাহিদা। মরদেহ বাসার পেছনে পাওয়া যায়। পেছনেও আরেকটি ভবন আছে। অর্থাৎ, দুই ভবনের মাঝে পড়েছিল মরদেহ।
সাহিদার বাঁ হাত ভাঙা এবং শরীরে কিছু জখম দেখা গেছে জানিয়ে ওসি বলেন, ময়নাতদন্তের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে আসলে কী হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।
আত্ম হ*ত্যা কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো কারণ এখনো জানা যায়নি। তদন্ত চলমান আছে।
সাহিদার ছোট ভাই ইউসুফ আলী বলেন, রবিবার বিকেল ৫টার দিকে আপুর সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয়। কিন্তু আপুর ফোনে সমস্যা থাকায় বারবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আপু কিছু একটা বলতে চাচ্ছিল আমাকে। পরে আরো দুবার ফোন করে কিন্তু আমি রিসিভ করতে পারিনি।
তিনি আরো জানান, ছোটবেলা থেকেই আকরাম খানের বাসায় কাজ করেন সাহিদা। সর্বশেষ মাসে সাত হাজার টাকা বেতন দিত। মাঝে-মধ্যেই বোনের কাছ থেকে টাকা নিতেন তিনি। সম্প্রতি বিয়ের জন্য ছেলে দেখছিলেন তারা।
আকরাম খান সাংবাদিকদের বলেন, সাহিদা তার বাসায় ১৪ বছর ধরে কাজ করছে। ঘটনার দিন রবিবার তার স্ত্রী ও মেয়ে বাইরে গিয়েছিল। বাসায় খেলা দেখছিলেন তিনি। বাসায় গৃহকর্মী আছে মোট চারজন। তার স্ত্রী ও মেয়ে ফেরার পর একজনকে খুঁজে পাচ্ছিল না। অনেক খোঁজার পর দেখা যায় সাহিদা ওখানে পড়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশকে ঘটনাটি জানান তিনি।
আকরাম খানের গাড়ির ড্রাইভার জয়নাল বলেন, রবিবার বিকেলে ম্যাডাম, তার মেয়ে ও খালাকে নিয়ে গুলশানে শপিংয়ে গিয়েছিলাম। বাসায় ফিরি রাত ১০টা ১০ এর দিকে। এ সময় সাহিদাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে জানতে পারি সে দুই ভবনের মাঝখানে পড়ে আছে।
তিনি বলেন, ১৯৯৮ সাল থেকে আকরাম স্যারের গাড়ি চালাই। সাহিদাকে অনেক দিন ধরেই চিনি। কখনো খারাপ কিছু দেখিনি। আকরাম স্যারের মেয়ে আতিফাকে দেখাশোনা করত সাহিদা। তার সঙ্গে ম্যাডামকে কখনো খারাপ ব্যবহারও করতে দেখিনি।