কানাইঘাটে ব্যবসায়ীর ১৩ লক্ষ টাকা লুট, বাঁচাতে আসা যুবক খুন

সিলেটের কানাইঘাটে এক ব্যবসায়ীর পথরোধ করে ১৩ লক্ষ টাকা লুট করে নিয়ে যাওয়ার সময় তাঁকে বাঁচাতে এসে খুন হলেন গিয়াস উদ্দিন নামের এক নিরীহ যুবক।

মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে উপজেলার সীমান্তবর্তী লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নের বাউরভাগ ৪র্থ গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটেছে। নিহত গিয়াস উদ্দিন (৩৩) বাউরভাগ ৪র্থ খন্ড গ্রামের হবিবুর রহমানের পুত্র।

এদিকে ঘটনার সাথে জড়িত জামাল উদ্দিন নামে একজনকে আটক করে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছেন স্থানীয়রা।

নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের পর বুধবার (২৮ জুন) বিকেল ৪টার দিকে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের পর বাদ মাগরিব নিহত গিয়াস উদ্দিনের জানাজার নামায বড়বন্দ বাজার মসজিদ প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বাউরভাগ ৪র্থ খণ্ড গ্রামের মৃত কালা মিয়ার পুত্র স্থানীয় বড়বন্দ বাজারের ব্যবসায়ী শাহাব উদ্দিন (৫০) গত মঙ্গলবার রাত অনুমান দেড়টার দিকে গিয়াস উদ্দিনকে সাথে নিয়ে বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। গ্রামের নাইকের বাড়ির পাশে আসার পর শাহাব উদ্দিন গিয়াস উদ্দিনকে তার নিজ বাড়িতে চলে যাওয়ার জন্য বলেন। শাহাব উদ্দিন নিজের বাড়ীর পাশে আসামাত্র সেখানে একই গ্রামের জাহির আলীর পুত্র সিরাজুল হক, সোনাতনপুঞ্জি গ্রামের শফিকুল হকের পুত্র একটি হত্যা মামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলার আসামি ইমন উদ্দিন, একই গ্রামের ফরিদ উদ্দিনের ছেলে নেওয়াজ উদ্দিনসহ অপরিচিত আরো ২ জনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। এ সময় শাহাব উদ্দিন তাদের পাশ কেটে বাড়ি যেতে চাইলে তার পথরোধ করে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারপিট করে শাহাব উদ্দিনের সাথে থাকা ব্যবসার প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা জোরপূর্বক লুট করে নিয়ে যায়।

তবে হামলাকারী জামাল উদ্দিন নামে একজনকে ঝাপটে ধরে চিৎকার শুরু করলে টাকা লুটকারী অপর ৪ জন দৌড়ে পালিয়ে যায়। তখন শাহাব উদ্দিন মোবাইল ফোন করে গিয়াস উদ্দিনকে তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসার জন্য বলেন। শাহাব উদ্দিনের চিৎকারে তার ছেলেসহ আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে হামলাকারী জামাল উদ্দিনকে আটক করেন।

একপর্যায়ে শাহাব উদ্দিন গিয়াস উদ্দিনকে আবারো কয়েকটি ফোন দিলে তার ফোন রিসিভ না হওয়ায় এলাকার লোকজন গিয়াস উদ্দিনকে খোঁজতে বের হলে একই গ্রামের মৌলভী খলিলুর রহমানের বাড়ির পশ্চিম পাশের ক্ষেতের মাঠে গিয়াস উদ্দিনের রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। এতে উপস্থিত লোকজন সকলে ধারণা করছেন শাহাব উদ্দিনের ফোন পেয়ে তাকে রক্ষা করতে গিয়াস উদ্দিন ঘটনাস্থলের দিকে এগিয়ে আসার সময় পালিয়ে যাওয়া অপর ৪ জন হামলাকারীর হাতেই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে সে খুন হয়েছে।

তাৎক্ষণিক বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা জামাল উদ্দিনসহ আরো অনেকে কানাইঘাট থানা পুলিশকে অবহিত করলে রাতেই কানাইঘাট সার্কেলের এএসপি আব্দুল করিম, থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম দস্তগীরসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পাশাপাশি নিহত গিয়াস উদ্দিনের লাশ উদ্ধার করেন এবং ব্যবসায়ী শাহাব উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে ঘটনাটি কিভাবে ঘটেছে তার বিস্তারিত জানেন। এসময় এলাকাবাসী ঘটনার সাথে জড়িত আটক জামাল উদ্দিনকে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন।

এদিকে টাকা লুট সহ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত অপর ৪ জনকে গ্রেপ্তার করতে থানা পুলিশ এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

ব্যবসায়ী শাহাব উদ্দিন বলেন, নিহত গিয়াস উদ্দিন তার খুব বিশ্বস্ত লোক ছিল। বিগত ৫ বছর ধরে তার ব্যবসার কাজে গিয়াস উদ্দিন সব-সময় সহযোগিতা করত এবং বাড়ির কাজকর্ম করত। সে খুব নিরীহ ও দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তিনি প্রতিদিন বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে প্রায়ই গিয়াস উদ্দিন তাকে বাড়ি পৌঁছে দিত। মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে বড়বন্দ বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে তার উপর হামলা চালিয়ে ১৩ লক্ষ টাকা ঘটনার সাথে জড়িতরা লুট করে নিয়ে যায়। তাদের মধ্যে জামাল উদ্দিনকে আমি ও আমার ছেলেরা আটক করি এবং গিয়াস উদ্দিনকে ফোন করে আমাকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসতে বলেছিলাম। কিন্তু গিয়াস উদ্দিন আমাকে বাঁচানোর জন্য আসার সময় আমার উপর হামলা চালিয়ে টাকা লুটপাটকারী অপর ৪ জন গিয়াস উদ্দিনকে পথিমধ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে।

নিহত গিয়াস উদ্দিনের বৃদ্ধ পিতা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘তার ছেলে ব্যবসায়ী শাহাব উদ্দিনের সাথে থেকে দিনমজুরির কাজ করে পরিবার চালাতো। রাতের বেলা সে শাহাব উদ্দিনকে বাড়িতে পৌঁছে দিত। কারো সাথে আমার ছেলের শত্রুতা নেই। শাহাব উদ্দিনকে রক্ষা করতে গিয়ে আমার ছেলে হামলাকারীদের হাতে খুন হয়েছে। এখন তার স্ত্রী ও অবুঝ ৩ ছেলে-মেয়েদের ভরণপোষণের দায়িত্ব কে নিবে। আমি হামলাকারীদের বিচার চাই।’

এ ব্যাপারে থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম দস্তগীরের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, শাহাব উদ্দিনের উপর হামলা চালিয়ে যারা টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে তারাই গিয়াস উদ্দিনকে হত্যা করেছে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার দায়ে তাৎক্ষণিক সোনাতনপুঞ্জি গ্রামের সুনাম উদ্দিনের পুত্র জামাল উদ্দিনকে আমরা আটক করেছি এবং এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করতে এলাকায় পুলিশের ষাড়াসি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গিয়াস উদ্দিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এবং ব্যবসায়ীর টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। তবে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে তিনি জানান।