দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয় ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। প্রথমে ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রার কথা জানালেও পরে তা কমিয়ে ৭০ শতাংশ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গতকাল ২৬ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচির ১৬ মাসে প্রথম ডোজ গ্রহীতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৮৯ লাখ ৯৫ হাজার ৮০৯ জন; যা জনসংখ্যার ৭৬ দশমিক ২৮ শতাংশ। আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১১ কোটি ৯১ লাখ ৯৯ হাজার ২৪৫ জন, যা মোট জনসংখ্যার ৭০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। সেই হিসাবে দেখা যায়, লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও প্রায় ১ কোটি বেশি মানুষকে প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে দ্বিতীয় ডোজেও।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘রিপোর্ট অন বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২০’-এর হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯১ লাখ। সুতরাং মোট জনসংখ্যার দেশের ৭০ শতাংশ জনসংখ্যাকে টিকার আওতায় আনতে হবে। সেই হিসাবে ১১ কোটি ৮৩ লাখ ৭০ হাজার মানুষকে টিকা প্রাপ্তির কথা থাকলেও প্রায় ১ কোটি ৬ লাখ ২৫ হাজার ৮০৯ জন বেশি মানুষ এসেছে প্রথম ডোজের আওতায়। আর লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে ৮ লাখ ২৯ হাজার ২৪৫ জন অতিরিক্ত মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে- লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে গেলে কি প্রথম ডোজ বন্ধ হয়ে যাবে?
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলেছে, দেশে টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করতে কয়েক দফায় বিশেষ ক্যাম্পেইনের ব্যবস্থা করা হয়। এসব ক্যাম্পেইনের আওতায় প্রায় কয়েক কোটি ডোজ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একদিনে ১ কোটি ২০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার কর্মসূচিও ছিল। তার আগে একদিনে ৮০ লাখ মানুষকে টিকা দেয় সরকার। এখন বুস্টার ডোজে জোর দেওয়া হচ্ছে। বুস্টার ডোজ এখন পর্যন্ত নিয়েছেন ২ কোটি ৮৭ লাখ ৮২ হাজার ৯০৪ জন।
দেশে এখন পর্যন্ত ছয় ধরনের টিকার দুই ডোজ মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে ২৪ কোটি ৮১ লাখ ৯৫ হাজার ৫৪ ডোজ। টিকা গ্রহীতাদের মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার দুই ডোজ নিয়েছেন ১ কোটি ৯০ লাখ ২০ হাজার ৪১৬ জন। ফাইজারের দুই ডোজ দেওয়া হয়েছে ২ কোটি ৭ লাখ ৮ হাজার ৭০১, সিনোফার্ম দেওয়া হয়েছে ৫ কোটি ৩৩ লাখ ২৭ হাজার ২৬০ জনকে, সিনোভ্যাক দুই ডোজ দেওয়া হয়েছে ২ কোটি ২৩ লাখ ২৬ হাজার ৮১৫ জনকে, জনসন অ্যান্ড জনসন দেওয়া হয়েছে ৩ লাখ ২৬ হাজার ১২১ জনকে এবং মডার্না দুই ডোজ দেওয়া হয়েছে ৩৪ লাখ ৮৯ হাজার ৯৩২ জনকে।
এর মধ্যে জনসন অ্যান্ড জনসনের এক ডোজের টিকা দেওয়া হয়েছে শুধু ভাসমান জনগোষ্ঠীকে। তাছাড়া ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকার দুই ডোজ দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৬০ লাখ ২২ হাজার ৮৩৭ জনকে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) পরিচালক ও কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়ার কথা বলেছে। আজকে ৭০ শতাংশ হয়ে যাবে। প্রথম ডোজ ৭৫ শতাংশ হয়ে গেছে, দ্বিতীয় ডোজ ৭০ শতাংশের কাছাকাছি। বেশি হলে সমস্যা নেই, সেটা আরও ভালো।
লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে গেলে প্রথম ডোজ বন্ধ হয়ে যাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনও রাষ্ট্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আমরা সামনে প্রথম ডোজের কার্যক্রম শেষ করে দিবো। এরপর দ্বিতীয় ডোজ দিয়ে শেষ করে দিবো। আমরা চিন্তা ভাবনা করছি যে প্রথম ডোজ কীভাবে গুটিয়ে আনা যায়, তবে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
টিকার আওতায় অধিকাংশ জনগোষ্ঠীকে নিয়ে আসার কারণে করোনায় মৃত্যু কম বলে মনে করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, যারা টিকা এখনও নেয়নি, তাদের অবশ্যই টিকা নিতে হবে। আমাদের ৭০ শতাংশ মানুষ টিকার আওতায় চলে এসেছে। এটা আমাদের জন্য আরেকটি মাইলফলক। আমাদের মানুষ সুরক্ষিত আছে তার প্রমাণ মৃত্যুহার কম, একেবারে নাই বললেই চলে।
এসময় তিনি বুস্টার ডোজ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান। মন্ত্রী বলেন, ‘যারা এখনও বুস্টার ডোজ নেননি, তারা যেন নিয়ে নেন।’