মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদীতে গ্রাম-বাংলার প্রায় হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শত বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা গ্রাম বাংলার এ ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরা উৎসব জানিয়ে দিচ্ছে মাছে-ভাতে বাঙালির দেশে মাছেরা হারায়নি। হারায়নি বহুল প্রচলিত মাছ ধরার উৎসবও। পুরোদমে শুষ্ক মৌসুম শুরু না হলে ও কমলগঞ্জ উপজেলার বুক চিরে প্রবাহিত ধলাই নদীতে শুরু হয়েছে পলো বাওয়া উৎসব।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সৌখিন মৎস্য শিকারীরা দল বেঁধে উৎসব মুখর পরিবেশে পলো বাওয়ায় অংগ্রহণ করে। পলো বাওয়া উৎসব হলো দল বেঁধে (বাঁশ দিয়ে বিশেষ ভাবে তৈরী ঝাঁপি) মাছ ধরা।
বুধবার (২ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টা থেকে কমলগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদীর উবাহাট এলাকা থেকে মৎস আহরণ শুরু হয়ে বিকাল ৪টায় চৈত্র ঘাট এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। এতে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের প্রায় শতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
এদিন ধলাই নদীর স্বল্প পানিতে বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে দল বেঁধে মাছ ধরার দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে পলো, উড়াল জাল, পেলেন জাল এসব দিয়েই মাছ শিকার করছেন মানুষরা। দলবদ্ধভাবে মাছ শিকারের এ দৃশ্য দেখতে ভিড় জমিয়ে ছিলেন উৎসুক জনতা। উৎসবে অংশ নেয়া মানুষদের উৎসাহ দিতে হাতে তালি কিংবা জোরে জোরে চিৎকার করে উৎসাহ প্রদান করছেন দর্শনার্থীরা।
বড়দের পাশাপাশি ছোট ছোট ছেলেরা ও যে যার মতো করে মাছ ধরার চেষ্টা করেছে। মাথা ও কোমরে আঁটসাট করে গামছা বেঁধে অনেকটা আনন্দ নিয়েই মাছ ধরছেন সবাই। শখের বসে মাছ ধরার উপকরণ নিয়ে অনেকেই নদীতে নেমেছেন মাছ ধরতে। দল বেঁধে সারিবদ্ধ হয়ে পলো দিয়ে পুটি, টেংরা, শোল, গাগট ও বোয়াল মাছ ধরেছেন। নদীর স্বল্প পানিতে ৩০/৪০জনের একটি দল একদিকে জাল নিয়ে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। আর অপরপ্রান্ত থেকে ৪০/৫০জনের সারিবদ্ধ দল পলো চাপিয়ে মাছ ধরতে ধরতে সামনের দিকে এগিয়ে আসেন।
উবাহাটা গ্রাম থেকে আসা আক্কাছ মিয়া বলেন, সবাই মিলে একসাথে মাছ ধরার আনন্দটাই আলাদা। এক কেজি ওজনের একটি গাগট মাছ পেয়ে আরো বেশি আনন্দ লাগছে।
আলাপকালে মাছ শিকারীরা জানান, দিন দিন পরিবেশ ও আবহাওয়ার প্রতিকূলতা, নদী-নালা, খাল-বিল, হাওরের তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে পানি হ্রাস এবং অধিকাংশ জলাশয় ইজারা দেওয়ায় বাওয়া উৎসব এখন অনেকটাই ভাটা পড়েছে। প্রাচীন এ উৎসবটিকে টিকিয়ে রাখতে সর্বমহলের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন; মনে করছেন তারা।