জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা তরান্বিত করা এবং নাগরিকদের হয়রানি কমাতে এবার মাঠ পর্যায়ে অযৌক্তিক দলিলাদি চাওয়া থেকে বিরত থাকতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শুধু তাই নয়, এখন থেকে কারো আবেদন নিষ্পত্তি করতে ক্যাটাগরি অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৩০ দিন সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েছে সংস্থাটি।
জানা গেছে, প্রায় ১০ লাখের মতো আবেদন পেন্ডিং অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া দিন দিন বাড়ছে আবেদনের সংখ্যা। কিন্তু মাঠ পর্যায় থেকে সেগুলো সুরাহা হচ্ছে না। ফলে নাগরিকদের ভোগান্তি বাড়ছে। এছাড়া অনেক সময় মাঠ কার্যালয় থেকে সেবাগ্রহীতার কাছে এতো বেশি কাগজ-পত্র চাওয়া হয়, যা সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। এতে ভোগান্তি সঙ্গে সঙ্গে সেবা পাওয়া থেকেও বঞ্চিত হন সাধারণ নাগরিকরা।
তবে, মাঠ কর্মকর্তাদের দাবি, একবার আবেদন নাকোচ হলে অনেকেই ফের আবেদন করেন। এছাড়া অনেকেই প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র চাওয়া হলে আর যোগাযোগ করেন না। এসব কারণে আবেদন ঝুলে যায়।
বিষয়টি নজরে আসায় নির্বাচন কমিশন আবেদনগুলো মাঠ পর্যায় থেকেই দ্রুত নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রমাণাদি সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আবেদন সংশোধন করা না গেলে বাতিল করতে হবে। অন্যথায় একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংশোধন করে দিতে হবে। এছাড়া বিশেষ কারণে কোনো সংশয় থাকলে ঢাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের জন্য পাঠানো যাবে।
ইসির এনআইডি অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন্স) মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী সোমবার (২৫ জুলাই) এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেশের সব আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়েছেন।
এতে বলা হয়েছে- জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যই ছিল নাগরিক সেবা আরও সহজ ও গতিশীল করা। সে লক্ষ্যে মাঠপর্যায়ে ক, খ, ও গ ক্যাটাগরির সংশোধনের আবেদনগুলো সংযুক্ত দলিলাদি যাচাই-বাছাইকরণ এবং প্রয়োজনানুসারে তদন্ত করতঃ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাই আবেদন নিষ্পত্তি (অনুমোদন/বাতিল) করে নাগরিক সেবাকে গতিশীল করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
নাগরিকদের দুর্ভোগ লাঘবে বিষয়টি লক্ষ্য রেখে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদন নিষ্পত্তি করতে হবে।
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তার আওতাভুক্ত (ক, খ, গ) ক্যাটাগরির আবেদনগুলো পরীক্ষার পর নিজেই নিষ্পত্তি (অনুমোদন/বাতিল) করবেন। যথাযথ শিক্ষা সনদ, জন্ম সনদ, বা অন্যান্য যৌক্তিক প্রয়োজনীয় দলিলাদি থাকা সত্ত্বেও অযৌক্তিকভাবে অতিরিক্ত দলিলাদি চাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
দীর্ঘদিন ধরে সংশোধনের আবেদন অনিষ্পন্ন রাখা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজনে শুনানি গ্রহণ ও দাখিলকৃত যৌক্তিক কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তার আওতাধীন আবেদন নিষ্পত্তি (অনুমোদন/বাতিল) করতে মাঠ পর্যায়ে সব ক্যাটগরির আবেদন নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সপ্তাহে ২ (দুই) দিন শুনানিরর ব্যবস্থা করতে হবে। শুনানির তারিখের পরবর্তী ১০ কার্য দিবসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।
ক্যাটাগরি বিভাজনের পর থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তার এখতিয়ারভুক্ত সংশোধনের আবেদনগুলো ক্যাটাগরি ‘ক’ ৭ কার্য দিবস, ক্যাটাগরি ‘খ’ ১৫ কার্য দিবস ও ক্যাটাগরি ‘গ’ ৩০ কার্য দিবসের মধ্যে নিষ্পন্ন করবেন।
আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা তার আওতাধীন যেসব আবেদন নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রনিতে ব্যর্থ হবেন, সেসব আবেদন সংশ্লিষ্ট দলিলাদি, তদন্ত প্রতিবেদন এবং আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা সু-স্পষ্ট মতামতসহ আবেদন নিষ্পত্তির জন্য মহাপরিচালক, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ বরাবর পাঠাবেন। এক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রজ্ঞাপনের আলোকে ‘গ’ ক্যাটাগরি হতে ‘ঘ’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরের সুপারিশ করতে পারবেন।
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তার কার্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সফটওয়্যারে ইউজার অ্যাকাউন্টটি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। সংশোধনের আবেদন নিষ্পন্নের বিষয়টি জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ থেকে কেন্দ্রীয় ভাবে পর্যবেক্ষণের আওতায় থাকবে।
সব ধরনের লগ এনআইডি কেন্দ্রীয় ডাটাবেজে সংরক্ষিত থাকে, এতে প্রত্যেক ইউজার তার কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহিতার আওতায় থাকবে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে- যেসব নাগরিক অনলাইনে আবেদন করতে অসমর্থ হবেন তাদেরকে উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে অনলাইনে আবেদনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে হবে। হেল্প ডেস্ক অনলাইন আবেদন সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ এবং সংশোধন সংশ্লিষ্ট যৌক্তিক দলিলাদির বিষয়ে তথ্য সরবরাহ করবে।
এছাড়া জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে আবেদনের ক্যাটাগরি বিভাজন করার ক্ষেত্রে অঞ্চল ভিত্তিক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সচেষ্ট থাকতে হবে।