সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় সাতজন, বগুড়ায় চারজন, সিরাজগঞ্জে তিনজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুইজন, গাজীপুরে দুইজন, নীলফামারীতে একজন এবং ময়মনসিংহের ত্রিশালে তিনজন নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় ২৪ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া পটুয়াখালীতে এক দুর্ঘটনায় ২০ জন আহত হয়েছেন।
শনিবার (১৬ জুলাই) ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে বাসের ধাক্কায় চারজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ৯ জন। শনিবার ভোররাতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দুল্যা মনসুর নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। আহতদের উদ্ধার করে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ঢাকাগামী একটি বালুভর্তি ট্রাক দুল্যা মনসুর নামক স্থানে মহাসড়কের একপাশে দাঁড়িয়েছিল। যাত্রীবাহী বিনিময় পরিবহনের একটি বাস ওই ট্রাকে পেছন থেকে এসে ধাক্কা দেয়। এতে বাসের যাত্রীরা হতাহতের শিকার হন।
গোড়াই হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্লা টুটুল জানান, তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজনের মৃত্যু হয়। তবে তাদের কারও পরিচয় পাওয়া যায়নি।
দুর্ঘটনার পর মহাসড়কে ঢাকার দিকে যান চলাচল বন্ধ থাকে। প্রায় দুই ঘণ্টা পর মির্জাপুর থানা পুলিশ রেকারের সাহায্যে দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি সরিয়ে নিলে সকাল পৌনে ৭টার দিকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
অন্যদিকে মির্জাপুরে মহাসড়ক পার হওয়ার সময় বাসচাপায় এক নারী ও তার দুই শিশু সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার পর মহাসড়ক অবরোধ করেন স্থানীয়রা। এতে ওই এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
শনিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের জামুর্কী এলাকায় বাসচাপায় তিনজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- মির্জাপুর উপজেলার বাশতৈল এলাকার মো. মাসুদের স্ত্রী পারভিন আক্তার (২৮) এবং তার দুই শিশু সন্তান সুমন (৮) ও সাদিয়া (৬)।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের পুলিশ বক্সের ইনচার্জ সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. নবিন বলেন, আহত অবস্থায় দুইজনকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। কিছুক্ষণ পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম বলেন, হেঁটে সড়ক পার হওয়ার সময় একটি বাস তাদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে একজন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর দুইজনের মৃত্যু হয়।
বগুড়ার কাহালু উপজেলায় প্রাইভেটকার ও পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় একজন আহত হয়েছেন। হতাহত সবাই প্রাইভেটকারের যাত্রী।
নিহতরা হলেন- নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার জহতনগর গ্রামের তানসের আলী ও তার ছেলে টগর, একই গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুর রহমান ও প্রাইভেট কারের চালক সুমন। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার বগুড়া-নওগাঁ আঞ্চলিক সড়কের কালেরপুকুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
কাহালু থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমবার হোসেন জানান, সকালে নওগাঁ থেকে একটি যাত্রীবাহী প্রাইভেট কার বগুড়ার দিকে যাচ্ছিল। পথে নওগাঁগামী একটি পিকআপের সঙ্গে প্রাইভেট কারটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেট কারের তিন যাত্রী নিহত হন। গুরুতর আহত হন আরও দুজন। তাদের বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে আরও একজন মারা যান।
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় বাস-ট্রাকের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১০ জন। তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দুপুর পৌনে ২টার দিকে হাটিকুমরুল-বনপাড়া সড়কের খালকুলা বাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লুৎফর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। তাত্ক্ষণিকভাবে হতাহতদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, আরপি পরিবহনের একটি বাস ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। বাসটি ভুল লেনে গিয়ে দাঁড়ানো একটি ট্রাককে ধাক্কা দেয়। এরপর বাস ও ট্রাক দুটি একত্রে গিয়ে আরেকটি ট্রাককে ধাক্কা দেয়। এই সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে তিনজনের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও প্রাইভেটকারের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সদর উপজেলার উজানিসার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নের মজলিশপুর গ্রামের বাসিন্দা অটোরিকশার চালক চাঁন মিয়া (৫০) এবং অটোরিকশার যাত্রী বিল্লাল হোসেন (৪৫)। তিনি কসবা উপজেলার খাড়েরা গ্রামের বাসিন্দা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরান হোসেন জানান, সকালে কুমিল্লা অভিমুখী একটি প্রাইভেট কারের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে দুইজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অটোরিকশার অন্য চার যাত্রী।
গাজীপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত হয়েছেন। ভোরে মহানগরের পুবাইলের বসুগাঁওয়ে ট্রাক-লেগুনা সংঘর্ষে একজন এবং একই এলাকার সুকুন্দিবাগ ব্রিজ এলাকায় দুই অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন।
পুবাইল থানা পুলিশের এসআই আবুল কাশেম জানান, পুবাইলের বসুগাঁও-এ ভোর চারটার দিকে টঙ্গীগামী ট্রাকের সঙ্গে উল্টোপথে আসা নরসিংদীগামী লেগুনার সংঘর্ষ হয়। এতে লেগুনার ১২ যাত্রী আহত হন। আহতদের মধ্যে মনিরুজ্জামান (৩৮) নামে একযাত্রী মারা যান। অন্য আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সকাল সাড়ে আটটায় পুবাইলের সুকুন্দিবাগ ব্রিজ এলাকায় দুই অটোরিকশার মুখোমুুখি সংঘর্ষে ইব্রাহিম হোসেন (৩৪) নামে এক যাত্রী নিহত হয়েছেন। ইব্রাহিম নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার ইদ্রিস আলীর ছেলে।
পুবাইল থানা পুলিশের এসআই জাহাঙ্গীর মাহমুদ জানান, সকাল সাড়ে ৮টায় অটোরিকশা দিয়ে জয়দেবপুর থেকে টঙ্গী যাচ্ছিলেন ইব্রাহিম। এ সময় তাকে বহনকারী অটোরিকশাটি সুকুন্দিবাগ ব্রিজ এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা অপর একটি অটোরিকশার সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় দুই অটোচালক আহত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার টেংগনমারী-মীরগঞ্জ সড়কের বটতলা শান্তিনগর বাজারে বেপরোয়া গতির একটি ট্রাকের চাপায় এক ভ্যানচালক নিহত হয়েছেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ভ্যানচালকের নাম আজিজুল হক (৪৫)। তিনি জলঢাকা উপজেলার আরাজি কাঠালি বালাপাড়া এলাকার মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জলঢাকা থানা পুলিশের উপপরিদর্শক নুরুল হক বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে এসে লাশ উদ্ধার করেছি। ট্রাকটি আটক করা হলেও চালক পলাতক রয়েছেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পটুয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কের মৌকরণ এলাকায় যাত্রীবাহী একটি বাস খাদে পড়ে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। তাদের পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শনিবার ভোরের দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দুমকি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুস সালাম জানান, ঈগল পরিবহনের একটি বাস ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে কুয়াকাটা যাচ্ছিল। পথে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের মৌকরণ ব্রিজের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়। এতে বাসে থাকা যাত্রীদের বেশিরভাগ আহত হয়েছেন।
ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকচাপায় একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। শনিবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ত্রিশালের কোর্টবিল্ডিং এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- জাহাঙ্গীর আলম (৪২), তার স্ত্রী রত্না বেগম (৩২) ও মেয়ে সানজিদা (৬)।
ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইন উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, নিহত রত্না বেগম সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। মেয়ে সানজিদাসহ রত্নাকে নিয়ে তার স্বামী একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে স্ত্রীর আল্ট্রাসনোগ্রাফি করাতে এসেছিলেন। এ সময় রাস্তা পারাপারের সময় ময়মনসিংহগামী একটি ট্রাক তাদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই স্বামী, স্ত্রী ও মেয়ে মারা যান। এ ঘটনায় ঘাতক ট্রাকটিকে আটক করা হলেও চালক পালিয়ে গেছেন।