সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার শাহ আরেফিন টিলায় পাহাড় কেটে সকল পন্থায় পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করে ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি আদেশ জারি করে মহামান্য হাইকোর্ট। পাথর উত্তোলন বন্ধে টিলার প্রবেশমুখে পাহারায় বসানো হয় কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের দু’টি টিমকে। তারপর থেকে শাহ আরফিন টিলায় অবৈধভাবে পাহাড় কেটে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকার কথা থাকলেও এ্ক এএসআইর দৌরাত্ম্যে থেমে নেই পাহাড় কাটা।
স্থানীয় শ্রমিকেরা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে চুরি করে পাথর উত্তোলন করে নিয়ে যায়। আর এ কাজে সহায়তার অভিযোগ থানা পুলিশের এএসআই টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে।
সাম্প্রতিককালে কোম্পানীগঞ্জ থানার এএসআই টিপু সুলতানের ম্যানেজ বাণিজ্যে উচ্চ আদালত ও সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই পাহাড় কেটে উত্তোলন হচ্ছে পাথর। শাহ আরেফিন টিলায় এএসআই টিপু ডিউটিতে গেলেই গাড়ি প্রতি (ছোট ট্রালি গাড়ী) ৩ শ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত টাকা উৎকোচ নিয়ে টিলা কেটে পাথর উত্তোলন ও পরিবহনের সুযোগ করে দিচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে।
টিপু সুলতানের ডিউটির দিন বা রাতে তাঁর নিজস্ব সোর্সদের মাধ্যমে টাকা আদায়ের মাধ্যমে হয় পাথর পরিবহন। গাড়ি প্রতি টাকা না দিয়ে কেউ চুরি করে পাথর পরিবহন করলে ঐসব গাড়ী আটকে মামলার ভয় দেখিয়ে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ অহরহর।
গত শনিবার (২৯ জুলাই) সরজমিনে শাহ আরেফিন টিলা এলাকায় গিয়ে দেখে যায় টিলা থেকে একে একে কয়েকটি ট্রালি গাড়িতে পাথর বোঝাই করে পুলিশ ক্যাম্প পাড়ি দিয়ে শাহ আরফিন-ভোলাগঞ্জ সড়ক দিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি গাড়িতে ৪০ থেকে ৫০ ঘনফুট ছোট ছোট পাথর রয়েছে। এসব গাড়ী শাহ আরেফিন টিলা থেকে পাথর পরিবহন করতে এএসআই টিপু সুলতানকে গাড়ি প্রতি টাকা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পাথর ব্যবসায়ীরা।
তারা প্রতিবেদককে বলেন, শাহ আরফিন টিলায় যেদিন টিপু স্যারের ডিউটি থাকে সেদিন আমরা সহজে পাথর নিতে পারি। ছোট ট্রালি গাড়ি প্রতি টিপু স্যারকে ৩ শ টাকা থেকে শুরু করে যে যত করে দিয়ে ম্যানেজ করতে পারে তারাই পাথর পরিবহন করতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাহ আরেফিন টিলার কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, এএসআই টিপু সুলতানের ডিউটির দিন উনাকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করতে পারলেই টিলা থেকে ট্রালি গাড়ি দিয়ে পাথর নেওয়া যায়। উনাকে টাকা না দিয়ে কেউ পাথরের গাড়ি নিলে তাঁদের গাড়ি আটক করে মামলার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। এএসআই টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের অভিযোগ ও টিলা থেকে পাথর পরিবহনের ভিডিও এবং অডিও প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
শাহ আরফিন টিলায় এএসআই টিপু সুলতানের পাথর বাণিজ্যের কর্মকাণ্ড অতিষ্ঠ কোম্পানীগঞ্জ থানার তারই সহকর্মীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক থানা পুলিশের কয়েক জন সদস্য বলেন, তিনি ডিউটিতে গিয়ে পাথর বোঝাই পাথর গাড়ি ছেড়ে পুলিশের সুনাম নষ্ট করছে। সিনিয়র জুনিয়র অফিসারেরা এসব কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে বললেও তিনি পাথর বাণিজ্য বন্ধ করছে না।
অভিযোগের ব্যাপারে এএসআই টিপু সুলতানকে ফোন দেওয়া হলে তিনি পাথর বোঝাই গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার কথা অস্বীকার করলেও মাটি বোঝাই গাড়ী শাহ আরফিন টিলা গিয়েছে বলে জানান। প্রতিবেদকের সাথে তার কথা শেষ হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তিনি শাহ আরফিন টিলার পাথর ব্যবসায়ী ও তার সোর্সদের দিয়ে প্রতিবেদককে নিউজ বন্ধ করতে বারবার অনুরোধ করাতে থাকেন।
কোন অনুরোধে কাজ না হওয়ায় কয়েক ঘন্টা পর তিনি নিজেই প্রতিবেদককে ফোন দিয়ে বলেন, শনিবার রাতে আমি কোন পাথর বোঝাই গাড়ি ছাড়িনি। তবে আপনার কাছে যদি কোন অভিযোগ থাকে এটার জন্য আমি দুঃখিত, আজকের পর থেকে আমি এসব কাজ আর কোন দিন করবো না।
এ ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি হিল্লোল রায় বলেন, টিপু সুলতানের দায়িত্বরত অবস্থায় শাহ আরফিন টিলা থেকে পাথর বোঝাই গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার খবর পেয়ে আমি অন্য আরেকজন অফিসারকে পাঠিয়েছি। তার (টিপু সুলতান) বিরুদ্ধে পাথর পরিবহনের সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ আগেও পেয়েছি। উর্ধ্বতন স্যারদের বিষয়টি জানিয়ে তদন্ত স্বাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।