ইসরায়েলের সাথে হামাসের চলমান যুদ্ধ পুরো বিশ্বের জন্য ‘সতর্কবার্তা’ বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত হুসাম জোমলোত। বলেছেন, যতদিন প্রয়োজন তার দেশের জনগণ নিজেদের অধিকারের জন্য এই লড়াই চালিয়ে যাবে।
রোববার (০৮ অক্টোবর) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেছেন হুসাম জোমলোত।
তিনি বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনি জনগণ কোথাও যাচ্ছে না। ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মরক্ষার অধিকার আছে। তারা শত বছর ধরে এবং প্রয়োজনে আরও ১০০ বছর লড়াই করবে।’
জোমলোত বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোকে বুঝতে হবে যে, আন্তর্জাতিক আইনে ইসরায়েলকে যা ইচ্ছে তাই করতে দেওয়া এবং ফিলিস্তিন ইস্যুকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে শান্তি আসবে না।
ব্রিটেনে নিযুক্ত ফিলিস্তিনি এই রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘ইসরায়েলের দখলদারিত্বের অবসান ঘটতে হবে… এবং একটি সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে; যার রাজধানী হবে পূর্ব জেরুজালেম। লাখ লাখ উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনির তাদের বাড়িঘর, সম্পত্তি, জমিতে ফিরে যাওয়ার শর্তহীন অধিকার রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এটা কীভাবে করব? এটা একেবারে সাধারণ- আন্তর্জাতিক আইনের সমান প্রয়োগের মাধ্যমে।’
আরও পড়ুন : দেশের সাধারণ জনগণকে যুদ্ধে যোগ দেওয়ার আহ্বান হামাসের
ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ড অবৈধভাবে দখল অব্যাহত রাখলে তার পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে ইসরায়েলের সরকারকে আগেই সতর্ক করে দেওয়ার দাবি করেছেন ইসরায়েলি একজন আইনপ্রণেতা। ওই সতর্কবার্তার পরও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তার দখলদারিত্বের নীতিতে পরিবর্তন আনেননি বলে জানিয়েছেন তিনি।
রোববার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটের বামপন্থী জোট হাদাশের সদস্য ওফার ক্যাসিফ।
শনিবার স্থানীয় সময় ভোরের দিকে ইসরায়েলে হাজার হাজার রকেট নিক্ষেপ শুরু করে হামাস। গাজাভিত্তিক সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর যোদ্ধারা ইসরায়েলি বিভিন্ন শহর ও অবৈধ বসতিতে অনুপ্রবেশ করে বহুমুখী হামলা চালায়।
আরও পড়ুন : ইসরায়েল-ফিলিস্তিন স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই একমাত্র সমাধান: চীন
এই হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৬০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর কয়েক ডজন সৈন্যও রয়েছেন। হামাসের হামলায় ইসরায়েলিদের অসংখ্য মরদেহ রাস্তায় পড়ে আছে। আর অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় কমপক্ষে ৩৭০ ফিলিস্তিনি নিহত ও এক হাজার ৭০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
বামপন্থী জোট হাদাশের সদস্য ওফার ক্যাসিফ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ইসরায়েলি সরকার যদি ফিলিস্তিনিদের প্রতি নীতিতে পরিবর্তন না আনে, তাহলে পরিস্থিতির বিস্ফোরণ ঘটবে বলে তিনি সতর্ক করে দিয়েছিলেন। ইসরায়েলের ১২০ সদস্যের পার্লামেন্ট নেসেটে হাদাশের চারটি আসন রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের ওপর যেকোনও ধরনের হামলার নিন্দা ও বিরোধিতা করি। ইসরায়েলি সরকারের বিপরীতে এর অর্থ হলো আমরা ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর যেকোনও হামলারও বিরোধিতা করি। আমাদের অবশ্যই সেই ভয়ানক ঘটনা (আক্রমণ) এবং চলমান দখলদারিত্বের বিষয়গুলো নিয়ে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে।
আরও পড়ুন : ১২ ঘণ্টার মধ্যে গাজা দখলের লক্ষ্যমাত্রা ইসরায়েলের
ওফার ক্যাসিফ বলেন, ‘আমরা বারবার সতর্ক করে দিয়েছি… সবকিছুর বিস্ফোরণ ঘটতে চলেছে এবং প্রত্যেককেই মূল্য দিতে হবে- প্রধানত উভয়পক্ষের নিরীহ নাগরিকদের। এবং দুর্ভাগ্যবশত, ঠিক তাই ঘটেছে।’
তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল সরকার একটি ফ্যাসিবাদী সরকার। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে জাতিগত নির্মূল অভিযানকে সমর্থন, উৎসাহ এবং নেতৃত্ব দেয়। সেখানে জাতিগত নিধন চলছে। ফিলিস্তিনিদের রক্তে এটা স্পষ্টতই দেওয়ালে লেখা আছে। দুর্ভাগ্যবশত এখন ইসরায়েলিরাও একই পরিণতি ভোগ করছে।’