ইরানে একটি মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভয়াবহ বিষ্ফোরণে অন্তত ১০৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও শতাধিক।
বুধবার (৩ জানুয়ারি) দেশটির দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় কেরমান শহরে এ ঘটনা ঘটে। এদিন ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) অভিজাত শাখা কুদস ফোর্সের সাবেক প্রধান কাশেম সোলাইমানির চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী ছিলো। এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
ইরানের সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, কাশেম সোলাইমানির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শত শত মানুষ তার সমাধিস্থলের দিকে যাওয়ার সময় জোড়া বিস্ফোরণ ঘটেছে।
ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, প্রথম বিস্ফোরণের কয়েক মিনিটের মাথায় দ্বিতীয় বিস্ফোরণ ঘটেছে। বিস্ফোরণে ১৭১ জন আহত হয়েছেন; যাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। কেরমানের সাহেব আল-জামান মসজিদের কাছে সোলাইমানির কবর থেকে কয়েকশ মিটার দূরে এই বিস্ফোরণ ঘটে।
কেরমানের ডেপুটি গভর্নর বিস্ফোরণের এই ঘটনাকে ‘‘সন্ত্রাসী হামলা’’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘এটা সন্ত্রাসী হামলা।’’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিস্ফোরণের একাধিক ভিডিওতে বেশ কিছু মরদেহ রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।
ইরানের আরেক বার্তা সংস্থা তাসনিম নিউজ এজেন্সি বলছে, জেনারেল কাশেম সোলাইমানির সমাধিস্থল থেকে ৭০০ মিটার দূরে প্রথম বিস্ফোরণ ঘটেছে। এরপর দ্বিতীয় বিস্ফোরণ ঘটেছে সমাধিস্থল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। বিস্ফোরণ স্থানের ভিডিও ফুটেজের সাথে তাসনিমের এই তথ্যের মিল আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ ভিডিওতে দেখা যায়, বিস্ফোরণে কাশেম সোলাইমানির সমাধিস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট কিছু অ্যাকাউন্ট থেকে জেনারেল সোলাইমানির স্মরণসভায় বিস্ফোরণে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। তবে তাসনিম নিউজ এজেন্সি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই দাবিকে ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির পর সোলাইমানিকে সবচেয়ে শক্তিশালী হিসেবে মনে করা হতো। ২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি ইরাকের রাজধানী বাগদাদের বিমানবন্দরের কাছে মার্কিন ড্রোন হামলায় কুদস ফোর্সের প্রধান সোলাইমানি নিহত হন।
জেনারেল সোলাইমানি ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর অভিজাত শাখা কুদস ফোর্সের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। দেশের বাইরে— বিশেষ করে ইরাক, লেবানন এবং সিরিয়ায় ইরানের সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন ধরনের অভিযান তার নেতৃত্বে পরিচালিত হতো।
সোলাইমানিকে গুপ্তহত্যার ঘটনায় ওই অঞ্চলে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা ব্যাপক আকার ধারণ করে। যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্র। সেই সময় সিরিয়া এবং ইরাকে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে ওই অঞ্চলের ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো হামলা চালায়।
বাগদাদে ড্রোন হামলার পরপরই তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, কাশেম সোলাইমানিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। একই সঙ্গে ইরানের শীর্ষ এই জেনারেলকে ‘‘বিশ্বের এক নাম্বার সন্ত্রাসী’’ হিসেবে অভিহিত করেন তিনি।