৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে তৃতীয় বারের মতো বিশ্বকাপ জিতেছে মেসির আর্জেন্টিনা। রোববার (১৮ ডিসেম্বর) ফ্রান্সের বিপক্ষে বিশ্বকাপের ফাইনালে জয়ের মাধ্যমে ১৯৮৬ সালের পর প্রথমবারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন খেতাব পেল দক্ষিণ আমেরিকান এই দেশটি।
আর এরপরই হাজার হাজার আর্জেন্টাইন রাজধানী বুয়েনস আইরেসের রাস্তায় নেমে আসেন। তাদের উল্লাস-উচ্ছ্বাস ছিল বাঁধভাঙা।
সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু।
ফ্রান্সের বিপক্ষে রোববারের নাটকীয় বিশ্বকাপ ফাইনালে আর্জেন্টিনা প্রথমার্ধে ২-০ তে এগিয়ে থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে দুই মিনিটে দুটি গোল হজম করে। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে মেসি গোল করলেও পরে পেনাল্টি কিক দিয়ে স্কোরে আবারও সমতা ফেরান এমবাপে।
শেষ পর্যন্ত পেনাল্টি শুটআউটে ফ্রান্সকে ৪-২ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ জয় করে আর্জেন্টিনা। আর এর মাধ্যমে ১৯৭৮ এবং ১৯৮৬ সালের পর তৃতীয়বার বিশ্বকাপ ঘরে তুলল আর্জেন্টিনা।
রয়টার্স বলছে, প্রায় ৮৮ হাজার দর্শক-ভক্তদের সামনে কাতারে খেলা উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে তারকা খেলোয়াড় লিওনেল মেসির নেতৃত্বে আর্জেন্টিনা ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে পরাজিত করে তৃতীয় বিশ্বকাপ ঘরে তোলার পর রাজধানী বুয়েনস আইরেসের রাস্তায় নেমে আসেন হাজার হাজার আর্জেন্টাইন নাগরিক। এসময় তারা উল্লাসে মেতে ওঠেন।
বিশ্বকাপ জয়ের পর পরিবারের সাথে জয় উদযাপন করতে বুয়েনস আইরেসের বাড়ির সামনের রাস্তায় বেরিয়ে আসে ১৩ বছর বয়সী ফুটবল ভক্ত সান্তিয়াগো। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কিশোর এই ফুটবল ভক্তের অনুভূতি, ‘আমি এটা বিশ্বাস করতে পারছি না! এটা কঠিন ছিল, কিন্তু আমরা এটা পেরেছি, মেসিকে ধন্যবাদ।’
রয়টার্স বলছে, পতাকা, টুপি এবং দেশের আইকনিক নীল-সাদা জার্সি নিয়ে আর্জেন্টাইনরা ফাইনালে জয়ের কয়েক মিনিটের মধ্যে বুয়েনস আইরেসের কেন্দ্রস্থল এবং অন্যান্য আইকনিক স্পট দখল করে নেয়। একই সময়ে দেশজুড়ে আরও অনেক স্থানে আনন্দ, উল্লাস ও উদযাপন ছড়িয়ে পড়ে।
বুয়েনস আইরেসের শহরতলির ৪৬ বছর বয়সী ডিয়েগো অ্যাবুর্গেলি বলছেন, ‘এটি একটি অবিশ্বাস্য খেলা ছিল, মাঝে মাঝে যন্ত্রণাদায়ক। এই দলটি গত কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো মানুষকে তাদের প্রেমে পড়তে বাধ্য করেছে।’
২০১৪ সালে জার্মানির বিপক্ষে টুর্নামেন্টের ফাইনালে হেরে যাওয়া দক্ষিণ আমেরিকান এই দলটি ১৯৮৬ সাল থেকে গতকালের আগপর্যন্ত বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। তবে দলের উত্থান আর্জেন্টিনাকে ব্যাপক উৎসাহিত ও উল্লসিত করেছে, যদিও দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটি উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত। যা দেশটির প্রায় ৪০ শতাংশ জনসংখ্যাকে দারিদ্রের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
৪৬ বছর বয়সী আইনজীবী নিকোলাস পিরি রয়টার্সকে বলেছেন, ‘এত উত্তেজনার পরে এটি এক অপরিসীম আনন্দ।’
তার ভাষায়, ‘একজন নেতার নেতৃত্বে দলের মধ্যে এই সামঞ্জস্য এবং তিনি (মেসি) এতটাই ভালো খেলেন যা তাকে বিশ্বের সেরা করে তুলেছে এবং খেলোয়াড়দের অবস্থা সাধারণভাবে আমাদের এই সাফল্যের দিকেই নিয়ে যায়। এগিয়ে যাও আর্জেন্টিনা!’
রোববারের ফাইনালে আর্জেন্টিনার হয়ে দু’টি গোল করেন ৩৫ বছর বয়সী মেসি, অপরটি করেন অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। অন্যদিকে ২৩ বছর বয়সী কিলিয়ান এমবাপ্পে এদিন ফ্রান্সের একমাত্র স্কোরার হিসেবে তিনটি গোল করেন।
রয়টার্স বলছে, বিশ্বকাপ জয় আর্জেন্টাইনদের মধ্যে কিংবদন্তি হিসেবে লিওনেল মেসির মর্যাদা নিশ্চিত করেছে। রোববারের এই ম্যাচটি আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে তার শেষ উপস্থিতি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।