আজ ৮ ডিসেম্বর শায়েস্তাগঞ্জ মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনেই শক্রমুক্ত হয়েছিল হবিগঞ্জ সদর উপজেলার শায়েস্তাগঞ্জ শহর। মুক্তিকামী জনতা আকাশে উড়িয়েছিল বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত লাল-সবুজ পতাকা।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালোরাতে হানাদার বাহিনীদের গণহত্যা শুরুর পর পরই স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এখানে গড়ে তোলেন প্রতিরোধ। বৃহত্তর সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে মুক্তিবাহিনী উড়িয়ে দেয় শায়েস্তাগঞ্জের খোয়াই ব্রিজটি। স্থানে স্থানে রেললাইনেও প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এরই মধ্যে ২৯ এপ্রিল হঠাৎ করেই পাক হানাদার বাহিনী শায়েস্তাগঞ্জ শহরে এসে উপস্থিত হয়। এখানে অবস্থান নিয়ে তারা (পাকরা) সাধারণ মানুষের ওপর চালাতে থাকে নির্মম অত্যাচার। যোগাযোগের জন্য খোয়াই নদীতে ফেরি চালু করে। স্থাপন করে ক্যাম্প। মেরামত করে ব্রিজটি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ থেকে জানা যায়, অসংখ্য মানুষকে চোখ বেঁধে বিধ্বস্ত খোয়াই ব্রিজের উপর থেকে কখনো গুলি করে, আবার কখনো হাত-পা বেঁধে জীবন্ত অবস্থাতেই নদীতে ফেলে দিত হায়েনার দল।
এদিকে সারা দেশের সঙ্গে সড়ক ও রেল এবং নৌপথের যোগাযোগের সুবিধার্থে হানাদার বাহিনী এখানে তাদের শক্তি বৃদ্ধি করতে থাকে। ফলে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা সাধারণ মানের অস্ত্র নিয়ে চোরাগুপ্তা হামলা চালালেও যুদ্ধে এদের সঙ্গে পেরে উঠছিলেন না।
অন্যদিকে এখান থেকে ভারত সীমান্ত কাছে থাকায় পাকিস্তানিরা সবসময় ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত থাকতো। পাশাপাশি মিত্রবাহিনীর ভয়ে ভীত থাকতো বলে গুপ্তচর সন্দেহে তারা নির্বিচারে অনেক সাধারণ মানুষকেও হত্যা করে।
অবশেষে আসে সেই শুভক্ষণ। ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর সিলেটের সর্বত্র যুদ্ধে হেরে পাকবাহিনী সড়ক ও রেলপথে শায়েস্তাগঞ্জ হয়ে ঢাকার উদ্দেশে পালাতে থাকে। দীর্ঘ ৯ মাস পর এলাকার সর্বস্তরের মানুষ বিজয় পতাকা হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। গগনবিদারী ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে শায়েস্তাগঞ্জ শহর।