সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে বিজিবি, থানা পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান থাকা সত্ত্বেও চোরাচালান বন্ধ হচ্ছে না। বিশেষ করে চোরাকারবারীরা নিরাপদে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার জন্য সীমান্তের লোভা নদী পথকে বেছে নিয়েছে।
সুরইঘাট ও লোভা সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাকারবারীরা ভারতীয় চিনি, মাদক সহ অন্যান্য ভারতীয় মালামাল অবৈধভাবে নিয়ে এসে ইঞ্জিন নৌকায় করে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার এবং তাদের গোডাউনে মজুদ করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছে।
অপরদিকে, সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান প্রতিরোধে আগের চাইতে বেশি বিজিবি’র টহল জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি চোরাচালান বন্ধে কানাইঘাট থানা পুলিশকে সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছে। সুরইঘাট বিজিবি ক্যাম্প সহ অন্যান্য ক্যাম্পের সদস্যরা ভারতীয় চিনি, নাসির বিড়ি, চা-পাতা, মাদক দ্রব্য, ভারতীয় কাপড়, কসমেটিক্স ও স্পোর্টস সামগ্রী, গাড়ীর যন্ত্রাংশ আটক করলেও চোরাচালান বন্ধ হচ্ছে না।
তবে গত শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) রাত কানাইঘাট থানা পুলিশ উপজেলার গাছবাড়ী বাজারের পাশে নিজ দলইকান্দি নয়াগ্রাম গ্রামের ফয়ছল আহমদের মালিকানাধীন নিপেন্দ্র রাম দাসের ভাড়াটিয়া গোডাউনে অভিযান চালিয়ে ১৬ বস্তা ভারতীয় চিনি উদ্ধার সহ নিপেন্দ্র রাম দাসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এছাড়াও গত ১৫ অক্টোবর রাত সাড়ে ১০টার দিকে লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের আন্দুরমুখ বাজারের রঞ্জন রায়ের দোকানে মজুদ রাখা ১২ বস্তা ভারতীয় চিনি আটক করে পুলিশ। চিনি আটকের ঘটনায় পৃথকভাবে দুইটি মামলা করেছে পুলিশ। তাছাড়াও বেশ কয়েকদিন পূর্বে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা কানাইঘাট দক্ষিণ বাজার থেকে ভারতীয় চিনি ব্যবসায়ী আব্দুর রহিমের ৫ বস্তা ভারতীয় চিনি আটক করে থানা হেফাজতে দেয়।
সীমান্তবর্তী সড়ক পথে বিজিবি, থানা পুলিশ সহ অন্যান্য বাহিনীর টহল আগের চাইতে জোরদার থাকায় চোরাকারবারীরা নিরাপদে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য লোভা ও সুরমা নদী দিয়ে ইঞ্জিন নৌকা করে ভারতীয় চিনি সহ অন্যান্য ভারতীয় পণ্য কানাইঘাট বাজার, বায়মপুর খেয়াঘাট, সাতবাঁক ইউনিয়নের লোভারমুখ, আন্দুরমুখ বাজার, লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নের চিন্তার বাজার, দিঘীরপাড় ইউনিয়নের দিঘীরপাড় সুরমা নদীর ঘাট, খুলুরমাটি, মন্তাজগঞ্জ বাজার এবং জকিগঞ্জ উপজেলার আটগ্রাম বাজারে নিয়ে মজুদ করে পরবর্তীতে বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে আসছে।
গাছবাড়ী এলাকাবাসী জানিয়েছেন, কয়েকদিন গাছবাড়ী-হরিপুর সড়ক দিয়ে চোরাচালান বন্ধ থাকলেও এখন জৈন্তাপুর উপজেলার চোরাকারবারীরা গাছবাড়ী-হরিপুর সড়ক দিয়ে ভারতীয় চিনি পরিবহন শুরু করেছে।
এছাড়া লোভাছড়া পাথর কোয়ারী থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করে জকিগঞ্জের আটগ্রামে ব্যাপকহারে মজুদ করা হচ্ছে। থানা পুলিশ লোভাছড়া কোয়ারীতে থাকা জব্দকৃত পাথর পাচার ও অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধে পাথর আটক অভিযান অব্যাহত রেকেছে।
কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল আউয়াল জানান, সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান প্রতিরোধে আগের চাইতে পুলিশের অভিযান জোরদার করা হয়েছে। নিয়মিত ভাবে পুলিশ ভারতীয় মালামাল আটক সহ বিশেষ করে ভারতীয় চিনি চোরাচালান বন্ধে ব্যাপক তৎপর রয়েছে। নিয়মিত মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামীদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। চোরাচালান বন্ধে তিনি পুলিশ সহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।