দেশ স্বাধীন হয়েছে অনেকটা আগে। বিজয়ের পতাকা এখন মুক্ত ভাবে ওড়ে। জাতির জনকের সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ এখন স্বপ্ন নয় সত্যের পথে। তবুও থেকে গেছে অমানবিকতার অন্ধকার, শিক্ষার অন্ধকার, অর্থনৈতিক অন্ধকার, সামাজিক অন্ধকার। সমাজের অশুভ শক্তিরা, স্বাধীনতা বিরোধীরা এখনো নানা রূপে নানা বর্ণে আস্ফালন করে। এখনো প্রয়োজন শুভ শক্তির উন্মেষের। মানবিকতার উন্মেষের।
শুভ শক্তির উন্মেষের লক্ষ্যে প্রতিবারের মত শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় শ্রুতি পুরানলেনস্থ কার্যালয় হতে বের হয় শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদ মিনারের উদ্দেশ্যে আলোর মিছিল।
বিজয়ের ৫২ বছর উপলক্ষে এবং তিনদিন ব্যাপী শ্রুতি বিভাগীয় আবৃত্তি উৎসবের শেষদিন উপলক্ষে এবারের আয়োজনটি বিশেষ আয়োজন ছিল। দিনের সূর্য ডুবে যাওয়ার পরপরই শুভ শক্তির উন্মেষের লক্ষে বের হয় আলোর মিছিল। আলোর সন্ধানী শতশত তরুন প্রজন্মের কন্ঠে ধ্বনিত হয় ‘ও আলোর পথযাত্রী, এ যে রাত্রী এখানে থেমো না’।
শিশু,বৃদ্ধ, নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলে অংশ নেন আলোর মিছিলে। আয়োজনের শুরুতে ছিল বিজয়ের গান, কবিতা পাঠ এবং মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনা।
এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবং বিজয়ের কথামালায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শামসুল আলম সেলিম, সাংস্কৃতিক জোটের গৌতম চক্রবর্তী, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক অপূর্ব শর্মা, কবি সুমন বনিক, শ্রুতি সমন্বয়ক সুমন্ত গুপ্ত।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সদস্যসচিবের স্বাগত বক্তব্য রাখেন আবৃত্তিশিল্পী এবং সংগঠক সুকান্ত গুপ্ত।
বিজয়ের কথা মালায় বক্তারা আরো বলেন – পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন, শোষণ, নির্যাতনের শৃঙ্খল ভেঙে বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিজয় অর্জিত হয়।
একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা লাভ করে বাংলাদেশ। এই দিনটি বাঙালি জাতির জীবনে সর্বোচ্চ গৌরবের একটি অবিস্মরণীয় দিন। জীবন দিয়ে যুদ্ধ করে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এই বিজয় অর্জিত হয়। যতদিন পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ থাকবে, বাঙালি জাতি থাকবে ততদিন এই দিনটির গুরুত্ব ও সম্মান অক্ষুণ্ন থাকবে।বাঙালি জাতির ইতিহাস লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস, আত্মত্যাগের ইতিহাস। সেই ইতিহাসের পথ ধরেই বাঙালি জাতি পরাধীনতার শৃঙ্খলা ভাঙতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। বাঙালির দুর্বার প্রতিরোধের মুখে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। এর মধ্য দিয়েই বিশ্ব মানচিত্রে স্থান পায় নতুন স্বাধীন দেশ বাংলাদেশ। আলোর মিছিলের মাধ্যমে এই প্রজন্ম দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ হবে এবং দেশের জন্য নিজেকে আত্মনিয়োগ করবে।
উল্লেখ্য শ্রুতির আলোর মিছিল দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে নিয়মিত হয়ে আসছে। ঐতিহ্যবাহী আলোর মিছিলে অংশ নেয় প্রগতিশীল বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন।
আলোর মিছিলের মাধ্যমে শ্রুতি সিলেটের তিনদিন ব্যাপী বিভাগীয় আবৃত্তি উৎসবের সিলেট বিভাগীয় এবং উদ্বোধনী আয়োজন সমাপ্ত হয়।