অব্যবস্থাপনা নিয়ে রনির ৬ দফার ব্যাখ্যা দিলো রেলওয়ে

বাংলাদেশ রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা দূরীকরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনির ছয় দফা দাবিসহ স্মারকলিপি দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এ বিজ্ঞপ্তিতে এ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।

১. বাংলাদেশ রেলওয়ের কম্পিউটারাইজড টিকিটিং ১৯৯৪ সাল থেকে চালু রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ২৭টি স্টেশনে স্ট্যান্ড এলোন সিস্টেমে টিকিটিং চালু হলেও সময়ের পরিক্রমায় ও ডিজিটাল পদ্ধতির আধুনিকতার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ রেলওয়ে সর্বাধুনিক টেকনোলজিক্যাল কৌশলের মাধ্যমে ৮৩টি স্টেশনে টিকিটিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সহজ লিমিটেড জেভি বর্তমানে রেলওয়ের টিকিটিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে কাউন্টার, অনলাইন ও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে যাত্রীদের টিকিট ইস্যু করা হচ্ছে।

টিকিট ইস্যুর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্তৃক নিয়মিত মনিটরিং করা হয় এবং যাত্রী হয়রানির কোনো অভিযোগ রেলওয়ের কোনো কর্মকর্তা/কর্মচারীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত হলে তা তদন্তপূর্বক বিভাগীয় ব্যবস্থা বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

বিগত ২৮ বছর ধরে চলমান সিস্টেমের যাত্রী চাহিদা বা প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে যখনই প্রয়োজন হয়েছে তখনই সিস্টেমটির মানোন্নয়ন করা হয়েছে, কারণ বাংলাদেশ রেলওয়ে যাত্রী সেবা দেওয়ার জন্য দেশের নাগরিকদের কাছে দায়বদ্ধ। যদি রেলওয়ের টিকিটিং সিস্টেমের উন্নয়নে সুস্পষ্ট অভিমত, মতামত বা সুপারিশ পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেলওয়ে তা বাস্তবায়ন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

২. বাংলাদেশ রেলওয়েতে টিকিট কালোবাজারির বিরুদ্ধে নানাবিধ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। টিকিটের ওপর যাত্রীর নাম, এনআইডি নম্বর, বয়স ও জেন্ডার উল্লেখ থাকে যাতে একজনের নামে ক্রয় করা টিকিটে অন্যজন ভ্রমণ করতে না পারে। তাছাড়া অনলাইন/মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি সাতদিনে সর্বোচ্চ দুইবারের বেশি রেলওয়ের টিকিট ক্রয় করতে না পারে টিকিটিং সিস্টেমে সে ব্যবস্থা রাখা আছে।

‘টিকিট যার ভ্রমণ তার’ স্লোগান বাস্তবায়নে বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে সংরক্ষিত জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটা ভেরিফাই করে টিকিট ইস্যুর প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত ফি জমা দেওয়া হয়েছে। অচিরেই বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের এ সংক্রান্ত চুক্তি সই হবে। চুক্তি সইয়ের পর বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিটিং ব্যবস্থাপনায় জাতীয় পরিচয়পত্র ভেরিফাই করার প্রক্রিয়া চালু হয়ে যাবে, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তির বিভিন্ন নামে বা বিভিন্নভাবে টিকিট ক্রয়ের সুযোগ বন্ধ করা সম্ভব হবে। তাছাড়া রেলওয়ে পুলিশ কর্তৃক স্টেশন এলাকায় টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধে নানাবিধ উদ্যোগ ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে।

টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধে ইতোমধ্যে রেলওয়ের গৃহীত কার্যক্রমের মাধ্যমে টিকিট কালোবাজারি অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে কারও যেকোন সুপরামর্শ পাওয়া গেলে বাংলাদেশ রেলওয়ে তা বাস্তবায়ন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ রেলওয়ে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক রেলযোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যাত্রীসেবা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রেলওয়ের বিভিন্ন অনিয়ম সম্পর্কে অভিযোগ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারীর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে প্রচলিত আইনানুসারে তদন্তক্রমে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে।

৩. বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিটিং সিস্টেমে বা প্রক্রিয়ায় অনলাইন কোটার টিকিট ব্লক করার বা টিকিট বুকিং করার কোন সুযোগ নেই। এছাড়াও অনলাইন বা কাউন্টার (অফলাইন) টিকিটিং এর দেশের সব নাগরিকের সমান অধিকার রাখা রয়েছে। টিকিট প্রাপ্যতা সাপেক্ষে যে কোনো নাগরিক রেলওয়ে কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করে টিকিট ক্রয় করতে পারে। বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিটিং সিস্টেমে টিকিট বৈষম্যের কোনো সুযোগ নেই।

৪. যাত্রী চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ট্রেনের সংখ্যা অনেক বাড়ানো হয়েছে। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার প্রাক্কালে বাংলাদেশ রেলওয়েতে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করতো ২১৮টি। যার মধ্যে আন্তঃনগর ট্রেন ছিল ৬৪টি, আন্তঃদেশীয় ট্রেন দুটি এবং লোকাল/মেইল/এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করতো ১৫২টি। বর্তমানে ২০২২ সালে বাংলাদেশ রেলওয়েতে যাত্রীবাহী ট্রেনের সংখ্যা ৩৬৬টি। যার মধ্যে আন্তঃনগর ট্রেন ১০৪টি, আন্তঃদেশীয় আটটি এবং লোকাল/মেইল/এক্সপ্রেস ট্রেনের সংখ্যা ২৫৪টি। অর্থাৎ বিগত ১৩ বছরে যাত্রীবাহী ট্রেন বাড়ানো হয়েছে ১৪৮টি। যার মধ্যে আন্তঃনগর ট্রেন বাড়ানোর সংখ্যা ৪০টি, আন্তঃদেশীয় ট্রেন ছয়টি ও লোকাল/মেইল/এক্সপ্রেস ট্রেন ১০২টি বাড়ানো হয়েছে। তাছাড়া রেলওয়ের নেটওয়ার্ক বাড়ানো ও ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর বিভিন্ন প্রকল্প চলমান রয়েছে, এর ফলে অচিরেই আরও ১৬টি জেলা রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে।

৫. বাংলাদেশ রেলওয়েতে দীর্ঘদিন নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ ছিল। সম্প্রতি নিয়োগ কার্যকম শুরু হয়েছে। লোকবল স্বল্পতার কারণে সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে যাত্রী সেবা দিতে বিঘ্ন ঘটে। উল্লেখ করা যায় যে, বাংলাদেশ রেলওয়েতে বর্তমান জনবল কাঠামো অনুযায়ী টিটিই পদমঞ্জুরী ৩৬৯টি, কর্মরত ১২২ জন, শূন্য ২৪৭টি পদ। টিসি পদমঞ্জুরী ৩৬৩টি, কর্মরত ১১৬ জন এবং শূন্য ২৪৭টি পদ। অর্থাৎ টিকিট চেকিং কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত অধিকাংশ পদ খালি থাকায় চেকিং কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তবে বর্তমানে চলমান নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হলে ট্রেনে মনিটরিং কার্যক্রম আরও সুচারুভাবে সম্পন্ন করা যাবে।

৬. ট্রেনে খাবার সরবরাহের ব্যাপারে বিভিন্ন ট্রেনে ক্যাটারিং প্রতিষ্ঠান নিয়োজিত রয়েছে। রেলওয়েতে বর্তমান বাজারমূল্যের থেকে কমে খাবারের দাম নির্ধারিত রয়েছে। হ্রাসকৃত ও ন্যায্য মূল্যে খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করণে বাংলাদেশ রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তাছাড়া আন্তঃনগর ট্রেনের প্রতিটি কোচে খাবারের মূল্য তালিকা টানানো থাকে এবং রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ফোন নম্বর উল্লেখ থাকে। যাত্রী হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেলে অথবা মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনাকালীন খাবারের মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত আদায় করা হলে প্রচলিত নিয়মানুযায়ী ক্যাটারিং প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়।

এছাড়াও, বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের নিমিত্তে বাংলাদেশ রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ ও বড় বড় স্টেশনে বিশুদ্ধ পানির সুব্যবস্থা রাখা হয়েছে। একজন যাত্রী বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি পান ও সংগ্রহ করতে পারেন।

তাছাড়া স্যানিটেশন ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৬০টি স্টেশনে প্ল্যাটফর্ম উচ্চতা বাড়ানো, ফেন্সিং নির্মাণসহ স্যানিটেশন আধুনিকায়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।