বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে একটা যৌক্তিক সময় দিতে চাই। আমরা সরকারকে সহযোগীতা করবো। তবে রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থার মধ্যে নিয়ে কথা বলতে হবে, সংলাপ করতে হবে। তা না হলে গণতন্ত্র ফিরবে না।
শেখ হাসিনার পতন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে যে শেখ মুজিবুর রহমানের নাম জড়িত, সেই ব্যক্তির মেয়ে শেখ হাসিনার এই করুণ পরিনতির জন্য আমার খুব কষ্ট হয় । শেখ হাসিনাকে তার দলের লোকেরা গণতন্ত্রের মানসকন্যা বলতো কিন্তু আজ মানুষ তাকে ধিক্কার দিচ্ছে। এই মুহুর্তে দেশে ৯৯ শতাংশ ধিক্কিত মানুষ হলেন শেখ হাসিনা। তার পতনের মূল কারণ হলো ক্ষমতার লোভ, দাম্ভিকতা আর দুর্নীতি।
বিএনপির আন্দোলন সংগ্রাম প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, এই আন্দোলন শুরু হয়েছে ২০১২ সালে। যখন থেকে নির্বাচন ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করা হয়, তখন থেকেই দেশে অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়। আওয়ামী লীগ তিনটি নির্বাচনে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করে রাখে। তখন থেকেই দেশ অস্থিতিশীল।
তিনি বলেন, সবচেয়ে ভয়ঙ্কর তথ্য হলো আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রের সবগুলো প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ফেলেছে। প্রশাসন-পুলিশ একদম ভেঙে শেষ করে ফেলেছে। অন্যান্য সেক্টরেও ভঙ্গুর অবস্থা। অর্থনীতিকে অকল্পনীয়ভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। এক কথায় সব শেষ করে দিয়েছে।
ফখরুল বলেন, আজকে যখন দেশ ঘুরে দাড়াবার চেষ্টা করছে, তখন শেখ হাসিনা ভারতে বসে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্ঠা করছেন। মানুষের এই অর্জন, নতুন করে দেশ গড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে সেটাকে নস্যাৎ করার চেষ্ঠা করা হচ্ছে। এতে বুঝা যায় আওয়ামী লীগ কখনও বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে নির্মান করতে চায় না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আগে কেউ কথা বলতে ১০ বার চিন্তা করতো, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে ধরা খাবো কী না, পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যায় কী না। সেখান থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি। মানুষ আজ নতুন করে জেগে ওঠেছে।
তিনি বলেন, আমরা ২০১২ সাল থেকে সংগ্রাম শুরু করেছি। এই সংগ্রামে ইলিয়াস আলীসহ ৭০০ জন গুম হয়েছেন। ২ হাজারের কর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। গায়েবানা মামলা কী জানতাম না। আওয়ামী লীগ তা আমাদের শিখিয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীদের উপর ১ লাখ ৪৫ হাজার মামলা রয়েছে। এতে আসামী রয়েছেন ৬০ লাখ।
ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইলিয়াস আলীর সন্ধানের জন্য আমরা অনেক আন্দোলন করেছি। বিভিন্ন জায়গায় দলের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়েছি। জাতিসংঘ থেকে একটি মানবাধিকার সংগঠন দেশে এসেছে। তারা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংগঠিত হত্যাকাণ্ড-গুম নিয়ে তদন্ত করছেন। আমরা আশাবাদি একটা খবর পাবো।
তিনি বলেন, ইলিয়াস আলী বেঁচে আছেন না মারা গেছেন তা আমরা কেউ বলতে পারছি না। কর্তৃপক্ষ আমাদের নিশ্চিত করে বলছে না ইলিয়াস আলী বেঁচে আছেন, না মারা গেছেন। আমরা পরিষ্কারভাবে জানতে ইলিয়াস আলী আমাদের মাঝে আছেন কী না।
মতবিনিময় সভায় সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী, ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা, জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ূম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিমানযোগে মির্জা ফখরুল সিলেটে আসেন। পরে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে হযরত শাহজালাল ও শাহপরান (রা.) এর মাজার জিয়ারত করেন। সফরকালে বিএনপি মহাসচিবের সহধর্মিণীও সাথে ছিলেন।