শিল্পী শফিকুন্নূর নিজের লেখা গান শুধু গাননি। তিনি হাছন রাজা, রাধারমণ, দুর্বিন শাহসহ সকলের গান গেয়েছেন। তিনি একজন বতিক্রমী শিল্পী ছিলেন। তার কণ্ঠের জাদুতে গানে তৃপ্তি পাওয়া যেত। সিলেট অঞ্চলের অপ্রচলিত অনেক গান অমরতা পেয়েছে তার কণ্ঠে। তিনি একজন খ্যাতিমান গীতিকার ছিলেন। বর্তমানেও শিল্পী শফিকুন্নূরের গানের কণ্ঠর সঙ্গে অন্য কারো গানের কণ্ঠ মেলানো যায়নি। তিনি মানেই আলাদা এক কণ্ঠস্বর। শফিকুন্নূর ছিলেন প্রকৃত সুরের এক জাদুকর।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিলেট নগরীর কিন ব্রীজ এলাকায় সারদা স্মৃতি ভবনের হল রুমে শিল্পী-গীতিকার ‘শফিকুন্নূর স্মরণানুষ্ঠানে’ বক্তারা এসব কথা বলেন। স্মরণানুষ্ঠানে শফিকুন্নূর স্মৃতি সংসদ আয়োজিত আলোচনা সভা, বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
স্মরণানুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন,‘শিল্পী শফিকুন্নূরের অতীত কর্মকাÐগুলো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। রাষ্টীয়ভাবে মূল্যায়ন করা দরকার। তার সৃষ্ট কর্মগুলো প্রচার করতে হবে। আমি মনে করে আমরা সবাই মিলে যদি তুলে ধরতে পারি, তাহলে আমাদের দাবি আদায় করতে পারব।’
সভায় আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন- বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী হিমাংশু বিশ্বাস, চন্দনা মজুমদার, জামাল উদ্দিন হাসান বান্না, কবি ড. মোস্তাক আহমাদ দীন, লোকসংস্কৃৃতি গবেষক ও প্রাবন্ধিক সুমনকুমার দাশ।
শফিকুন্নূর স্মৃতি সংসদের আহবায়ক শাহ মো. আলীনূরের সভাপতিত্বে নাট্যকার ও নাট্য নির্দেশক হুমায়ুন কবির জুয়েল সঞ্চালনায় সুমনকুমার দাশ সম্পাদিত গ্রন্থ ‘শফিকুন্নূর সমগ্র’র মোড়ক উন্মোচন করা হয়। স্মরণানুষ্ঠান উপলক্ষে একটি স্মারক-সংকলন প্রকাশ করা হয়; যার সম্পদনায় রয়েছেন হুমায়ুন কবির জুয়েল। আর প্রকাশনায় রয়েছেন শিল্পী শফিকুন্নূরের তিন পুত্র জুবের আখতার সোহেল, শামছুল ইসলাম রুবেল ও খালেদ হাসান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বগতে বক্তব্যে শিল্পী শফিকুন্নূূর স্মৃতি সংসদের সদস্য সচিব শামছুল ইসলাম রুবেল বলেন,‘ আমি প্রথমে ধন্যবাদ জানাই সুমনকুমার দাশকে। কারণ তার হাতের ছোঁয়াতে বইটি পূর্ণতা পেয়েছে। বাউল সাধকের গানকে ভালোবেসে আপনারা সবাই এসেছেন; আমার পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ভবিষ্যৎতে আমরা যাতে আরও বড় অনুষ্ঠান করতে পারি আপনারা দোয়া করবেন।’
অনুষ্ঠানের শুরুতে উদ্বোধনী নৃত্য করেন- জয়িতা জেহেন প্রিয়তী। অনুষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন জুবের আখতার সোহেল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বাউল আবদুর রহমান, বাউল বিরহী কালা মিয়া, মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম অচিনপুরী, বাউল সিরাজ উদ্দিন, মালতী পাল, বাউল হারুন মিয়া, বিরহী লাল মিয়া, শামীম আহমদ, বাউল সূর্যলাল দাস, তন্বী দেব, পথিক রাজু ও শামছুল ইসলাম রুবেল প্রমুখ। এছাড়া সিলেটের নানা শ্রেণি-পেশার দেড় শতাধিক মানুষজন উপস্থিত ছিলেন।